আওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভবাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর বার্তা দিল বিএনপি’র তৃণমূলের নেতা কর্মীরা

আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক করেছে বিএনপি’র তৃণমূলের নেতারা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি সমঝোতার কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে বা সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা হবে আত্মহত্যার শামিল।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়েও অঙ্গীকার করেছেন তারা। বিভাগভিত্তিক মতবিনিময় সভায় এমন মনোভাবের কথা জানান বিএনপি’র তৃণমূলের নেতারা। ১লা অক্টোবর থেকে ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে চার দিনব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন কর্মসূচি সাজাতে এবং বিভাগীয় শহরে ঘোষিত ১০ গণসমাবেশ সফল করতে জেলা, বিভাগ ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।

সূত্র জানায়, দলের ক্রান্তিলগ্নে সব দ্বন্দ্ব ও ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক কাতারে এসে আন্দোলন করতে সভায় আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। বিভাগীয় নেতাদের উদ্দেশে দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা বলেন, এ মুহূর্তে কার পদ আছে, কার নেই, কে ওপরে, কে নিচে কিংবা কে মূল্যায়িত হননি- সেসব নিয়ে কোন্দল করা যাবে না।

আগে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তৃণমূলের নেতাদের আশ্বাস দিয়ে সভায় শীর্ষ নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে আশার সঞ্চার হয়েছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় অসম্ভব কিছু না। এতে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

সভায় আগামী ১০ বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেয় দলের হাইকমান্ড। কেন্দ্র থেকে সরকারের নানা ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অনিয়মসহ গঠনমূলক বক্তব্য লিখিতভাবে মাঠ নেতাদের সরবরাহ করার কথা বলেন শীর্ষ নেতারা।

একই সঙ্গে প্রত্যেক থানা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে পথসভা, কর্মিসভা করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা। সভায় অংশ নেয়া একাধিক নেতা জানান, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেবে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা।

সভায় জেলা ও মহানগরের নেতারা বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনে দলের বেঈমানরা সক্রিয় না হলে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতো না। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু বিশ্বাস ঘাতকের প্ররোচনায় বিএনপির হাইকমান্ড আন্দোলন থামিয়ে দেয়।

দল, আন্দোলন ও নিজেদের করণীয় নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন সভায় অংশ নেয়া নেতারা। মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য সিনিয়র নেতারা পর্যায়ক্রমে উপস্থিত ছিলেন।রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেওয়াতে চায় সরকার। যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলে তাদের ১০০ আসন দেওয়া হবে।

তবে শর্ত হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে থাকবেন। বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এমন আভাস দিচ্ছেন। সভায় এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিএনপি’র তৃণমূল নেতারা।

সভায় দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেয়ার পাঁয়তারা করবে তাদেরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা। তাদের দাবি, বিএনপি’র তৃণমূল কখনো বেঈমানি করেনি। কেন্দ্রীয় কিছু নেতা লোভে পড়ে বিগত দিনে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছেন।

এবার যদি কেউ একই রকম ভুল করার সাহস দেখায় তবে তার ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার যদি আর কোনো বেঈমানের আবির্ভাব ঘটে তা হলে তার বিচার দলের হাইকমান্ড নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরা করবে।

তাঁরা মনে করেন, এবারের লড়াই সারা দেশের নেতাকর্মীদের বাঁচা-মরার লড়াই। হয় জিততে হবে, নয় মরতে হবে। এ আন্দোলন সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠে থাকারও আহ্বান জানানো হয়।  জনসম্পৃক্ত জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নেওয়া এবং বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনসমাগম বাড়ানোর ব্যাপারে সভায় আলোচনা হয়।

সরকারের তরফ থেকে যত বাধাই আসুক শক্ত হাতে মোকাবিলা করা এবং ডিসেম্বর বা জানুয়ারি থেকে সরকার পতনের একদফা চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়। সাবেক প্রবীণ ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করার পাশপাশি দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন সভায় অংশ নেওয়া নেতারা।

সমমনা সবগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের মাধ্যমেই যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। একই সঙ্গে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিনক্ষণও তখন জানানো হবে। বিদেশিদের সমর্থনের ওপর ভরসার বিষয়ে এক নেতার প্রশ্নের জবাবে শীর্ষ এক নেতা বলেন, বিদেশিদের সহযোগিতা ও সমর্থনও প্রয়োজন হবে। তবে নিজেদের সক্ষমতাও দেখাতে হবে।

বিভাগগুলোর একাধিক নেতা বলেন, এখন কর্মসূচিগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছে। তবে কর্মসূচি করতে প্রশাসনের বাধা ডিঙ্গাতে হচ্ছে। কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। একজন অনুমতি দেন, অন্যজন আবার বন্ধ করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো গেলে প্রশাসনও নিরপেক্ষ হতে বাধ্য হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের আগে ঢাকা মহানগরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজাতে আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী, রংপুর ও কুমিল্লা বিভাগের জেলা ও মহানগরের নেতারা। তারা বলেন, বিগত দুটি আন্দোলন ঢাকা মহানগরের ব্যর্থতার কারণে সফল হয়নি।

তবে আগের মহানগর কমিটির চেয়ে এবারের কমিটি অনেক বেশি তৎপর। তবু আন্দোলন শুরুর আগে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটকে সর্বোচ্চ শক্তিশালী করতে হবে। সারাদেশে আন্দোলন সফলতাকে কার্যকরী করতে ঢাকা মহানগরকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ শুরু করবে বিএনপি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং সবশেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে মহাসমাবেশ।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button