বাংলাদেশস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

এবছর ডেঙ্গুতে এতো শিশু মারা যাওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা

এবছর ডেঙ্গুতে রেকর্ড-সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কম বয়সীদের মৃত্যু বেশি। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা যেসব লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে আসছে, সেগুলো এর আগে তেমন দেখা যায়নি। এরমধ্যে ফুসফুসের রক্তক্ষরণ নতুন উপসর্গ। কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

হঠাৎ অবস্থার  অবনতিতে অনেকেই মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের তীব্র জ্বর দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১৪৮ জনের সাধারণ তথ্য পর্যালোচনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে দেখা গেছে, এরমধ্যে ৪০ জনই শিশু। ফলে ডেঙ্গুতে এতো শিশু মারা যাওয়ায় অভিভাবকরা রয়েছেন ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে এ পর্যন্ত ১৯২ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। যা দেশে এক বছরে মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১৪৮ জনের সাধারণ তথ্য পর্যালোচনা করেছে।

মৃত্যু বেশি দেখা যাচ্ছে ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে ৩০ জনের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। ২৩ জনের বয়স ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ মৃতদের প্রায় ৩৬ শতাংশের বয়স ১০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, শূন্য থেকে ১ বছরের একজন, ১ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে ৯ জন, ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে রয়েছে ২৩ জন।

মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাত সদস্যের একটি কমিটিও করেছে।এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের এতো মৃত্যু কেন- জানতে চাইলে  ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার যেসব লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে ডেঙ্গু রোগী আসছে, সেগুলো এর আগে তেমন দেখা যায়নি।

যেমন ফুসফুসে রক্তক্ষরণ একটি নতুন উপসর্গ। কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসছে। হঠাৎ অবস্থার অবনতিতে অনেকেই মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত বড় বাচ্চাদের বেশি জটিলতা দেখা দিচ্ছে যা আগে ছিল না। বড় বাচ্চাদের মধ্যে অনেকে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছে।

তুলনামূলকভাবে বেশি বয়সীরা হৃদ‌রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগে বেশি ভোগেন। এই বয়সীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বয়স বিভাজনের তথ্য বলছে, ১৪৮ জনের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। অর্থাৎ মৃতদের ৩০ শতাংশের বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিনদিনের মধ্যে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। ৯৫ জনের বা ৬৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে। বাকি ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ভর্তির ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে। নারীদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। ১৪৮ জনের মধ্যে নারী ৮২ জন এবং বাকি ৬৬ জন পুরুষ।

ডেঙ্গু রোগের ধরনে কিছু পরিবর্তন আসছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. টিটু মিয়া বলেন, বর্তমান প্রবণতা হচ্ছে, আক্রান্ত রোগীদের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ বছর কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যু বেশি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক মো. টিটু মিয়া বলেন, এর জন্য গবেষণা বা গভীর অনুসন্ধান দরকার। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পর্যালোচনার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে হয়তো উত্তরটা জানা যাবে।

চিকিৎসকরা বলেন, এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা নানাধরনের লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছে, এর মধ্যে পেট ফুলে যাওয়া, পেট ব্যথা, বুকে ব্যথা, তীব্র বমি, কারও কালো পায়খানা, কারও নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো উপসর্গ রয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো এবার অনেক ছোট বাচ্চাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে।

পাঁচ-ছয় মাসের শিশু তো আছেই। সর্দিকাশির সঙ্গে জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে ডাক্তাররা বলেন, প্রথম তিনদিন জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকবে। জ্বর কমে গেলেই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়। সে সময় যেন তারা চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকে। আর প্রচুর পানি এবং তরল খাওয়াতে হবে শিশুদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের তথ্য মতে, এবার ১৮ হাজার ৮৯১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ৬ শতাংশ, ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ, ১৯ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে ২৮ শতাংশ, ৩০ থেকে ৩৯ বছরের ১৭ শতাংশ, ৪০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছরের ৭ শতাংশ এবং ৬০ বছরের উপরে ৪ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button