আওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভখুলনাজাতীয়বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

গভীর রাত পর্যন্ত খুলনায় ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরকারী নেতাকর্মীদের হামলা

সোনাডাঙ্গা যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শহরে ঢোকার অন্যতম প্রবেশপথ। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত সোনাডাঙ্গাসহ খুলনায় ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার কয়েকজন বলেছেন এসব কথা। তবে পুলিশ বলছে, তারা এ রকম কোনো কিছু জানে না।

যশোরের কেশবপুর উপজেলা থেকে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গায় পৌঁছান শহিদুল ইসলাম। একটি পিকআপে শহিদুলরা অন্তত ৬০ জন ছিলেন। শহিদুল বলেন, সোনাডাঙ্গা থানার সামনে পৌঁছানোমাত্র এলোপাতাড়ি হামলার শিকার হন সবাই। শহিদুলের হাতে ও পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে। মাথা ফেটে গেছে সঙ্গে থাকা জিয়াউল হোসেনেরও।

রাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জিয়াউল হোসেন বলেন, ‘রাত অনুমান একটা হবে। গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানার সামনে আসতেই দেখলাম কিছু লোক দৌড়ে এল। বলল, এই গাড়ি দাঁড়াও। এরপর কোনো কথাবার্তা নেই, লাঠিসোঁটা নিয়ে মাইর।’

আজ শনিবার ভোরে আহত ব্যক্তিদের অনেককে দেখা গেছে খুলনা সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির সমাবেশস্থলের আশপাশে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের ফেরিঘাট মোড়ে খুলনা বাস মোটর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ের পাশে দেখা হয় শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। রাস্তায় ফুটপাত ঘেঁষে একটি প্লাস্টিকের বিছানার ওপর বসে আছেন।

রাতে ফুটপাতেই ঘুমিয়েছেন। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। তখনো ডান হাতের কনুই থেকে রক্ত ঝরছে। ডান পায়ের ঊরু থেঁতলে গেছে লাঠির আঘাতে। পাশে বসে আছেন জিয়াউল হোসেন। মাথায় রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি রাত কাটিয়েছেন ফুটপাতে। তাঁর সামনে দেখা গেল পলিথিনে মোড়ানো কিছু ওষুধ।

ফেরিঘাট মোড়ের অদূরেই আপার যশোর রোডের ফুটপাতে লাল জামা গায়ে বসে আছেন একজন। মাথায় রক্তভেজা ব্যান্ডেজ। কাছে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর পরনের লাল জামার কলার, কাঁধে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ। কথা বলে জানা গেল, তাঁর নাম আক্তারুজ্জামান সুমন। তিনি যশোর জেলা ছাত্রদলের সদস্য।

রাত আড়াইটার দিকে  সোনাডাঙ্গা এলাকায় তাঁদের বহনকারী ট্রাকের ওপর হামলা চালান ৩০-৪০ যুবক। সবার হাতে হকিস্টিক, লোহার রড, কাঠ ও বাঁশের লাঠি ছিল। হামলায় সুমনসহ ৮ থেকে ১০ জন আহত হন।হামলার ব্যাপারে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘আমার কাছে এমন কেউ আসেওনি, আমি জানিও না। আমি তো রাত দেড়টা-দুইটা পর্যন্ত বাইরে ছিলাম, কেউ তো বলেওনি।’

জিয়াউল হোসেন ও শহিদুল ইসলামের বয়স ষাটোর্ধ্ব। বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি। দুজনই কৃষিকাজ করেন। বিএনপি করেন। সমাবেশে যোগ দিতে অনেকের সঙ্গে খুলনায় এসে রাতে এই বিপদে পড়েছেন।শহিদুল ইসলাম বলেন, মারধর করতে করতে হামলাকারীরা তাঁর পকেট থেকে ১০০ টাকা ও মুঠোফোনটি নিয়ে গেছেন।

জিয়াউল হোসেন বলেন, তাঁর পকেট থেকে ৭০০ টাকা কেড়ে নিয়েছেন। পাশেই বসে আছেন একই এলাকার বাসিন্দা মাজিদ সরদার। তিনি মার খাননি। তবে তাঁর পকেট থেকে ৫০০ টাকা ও মুঠোফোনটি হামলাকারীরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।

আজ সকালে সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাঠপর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকে রাস্তায়-ফুটপাতে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছেন, আবার অনেকে দাঁড়িয়ে, কেউবা বসে বসে বক্তৃতা শুনছেন। সূর্যের আলো ছড়াতেই কেউবা আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠছেন।

যশোর রোডের ফুটপাতে ঘুমান কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা একটি দল। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় তাঁরা সমাবেশস্থলে পৌঁছান। প্রত্যেকে সঙ্গে শুকনা খাবার নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান। কুমারখালীর যুদবয়রা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আল আমিন। তিনি বলেন, শহরে ঢোকার সময় তাঁরা হামলার শিকার না হলেও মেইল ট্রেনে আসার সময় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে হামলার শিকার হন।

বাগেরহাটের রামপাল থানার তালতলিয়া গ্রাম থেকে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী  গোলাম আজম। বললেন, তাঁরা ছয়টি বড় পিকআপে একসঙ্গে ৪৫০ জন এসেছেন। রাস্তায় রূপসা সেতুর টোলে এবং কাটাখালী ও খুলনার জিরো পয়েন্টে বাধা পান। এর মধ্যে কাটাখালীতে লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। তাঁদের নগরের রাইনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান গোলাম আজম।

ফেরিঘাট মোড়ের অদূরেই আপার যশোর রোডের ফুটপাতে লাল জামা গায়ে বসে আছেন একজন। মাথায় রক্তভেজা ব্যান্ডেজ। কাছে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর পরনের লাল জামার কলার, কাঁধে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ। কথা বলে জানা গেল, তাঁর নাম আক্তারুজ্জামান সুমন।

তিনি যশোর জেলা ছাত্রদলের সদস্য। রাত আড়াইটার দিকে  সোনাডাঙ্গা এলাকায় তাঁদের বহনকারী ট্রাকের ওপর হামলা চালান ৩০-৪০ যুবক। সবার হাতে হকিস্টিক, লোহার রড, কাঠ ও বাঁশের লাঠি ছিল। হামলায় সুমনসহ ৮ থেকে ১০ জন আহত হন।

হামলার ব্যাপারে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘আমার কাছে এমন কেউ আসেওনি, আমি জানিও না। আমি তো রাত দেড়টা-দুইটা পর্যন্ত বাইরে ছিলাম, কেউ তো বলেওনি।’

গতকাল রাতেই খুলনায় এসে পৌঁছেছেন সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁরা গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পরও সমাবেশে যোগ দিতে আসা মানুষের ওপর সরকারদলীয় লোকজনের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মির্জা ফখরুল আজ সকালে বলেন, ‘এটা (হামলা-বাধা) হচ্ছে আওয়ামী লীগের পুরোনো চরিত্র। তারা জনগণের জাগরণের ভয়ে ভীত হয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাসীদেরও রাস্তায় নামিয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। এত কিছুর পরও প্রতিবাদী জনতা রাস্তায় নেমেছে, এটাই হচ্ছে মূল বিষয়। এতে পরিষ্কার যে মানুষ গণতন্ত্রের মুক্তি চায়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন চায়, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়।’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button