আওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশবিএনপিরাজধানীরাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশের একজন মানুষও বিশ্বাস করে নাঃ আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসিকে বলেছেন একমাত্র আওয়ামী লীগের সময় সঠিক নির্বাচন হয়। তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশের একজন মানুষও বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, গুম, খুন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিবিসি শেখ হাসিনাকে কেন প্রশ্ন করল, এর মাহাত্ম্য কী, কারও বোঝার বাকি আছে?আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে দলের তিন নেতা–কর্মী হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ এই সমাবেশ হয়।

বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বিবিসির সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছেন, যে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এসেছেন, তাঁর প্রতিনিধি ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছেন বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এর উত্তরে কী বলবেন?

আমির খসরু বলেন, মাথায় কিছু থাকলে আওয়ামী লীগের সময় নির্বাচন সঠিক হয়—কেউ এ রকম উত্তর দেয়?সমাবেশে যুক্তরাজ্যের রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে বিবিসিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে আমীর খসরু বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) বিবিসিকে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছেন, আপনারা দেখেছেন? ইন্টারভিউতে উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, বাংলাদেশে আগামী দিনে সঠিক নির্বাচন হবে কি না? উনি বলেছেন, একমাত্র আওয়ামী লীগের সময় সঠিক নির্বাচন হয়।’

এ সময় উপস্থিত দলীয় সমর্থকেরা সমস্বরে ‘ভুয়া, ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ তুললে আমীর খসরু  বলেন, ‘আরও কথা আছে। যে কথাটা উনি বলেছেন, বাংলাদেশের একটা লোকও কি সেটা বিশ্বাস করে? আওয়ামী লীগাররাও কি বিশ্বাস করে? সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করে?’ তখন সবাই ‘না, না’ বলে জবাব দেন।

সমাবেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওনার তো লজ্জা থাকা উচিত। বিদেশে একটা সরকারপ্রধানকে যখন এই প্রশ্ন করা হয়, তখন ওনার তো বোঝা উচিত, এ প্রশ্নটা কেন করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রশ্ন করবে? নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রশ্ন করবে? তো শেখ হাসিনাকে কেন এই প্রশ্ন করছে। এর মাহাত্ম্য আর বোঝার বাকি আছে?’

বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগের নেতা কে? আপনারা লক্ষ্য করবেন, আজকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের হাতে কোনো নেতৃত্ব নেই। চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার মমিনুর রহমান এখন আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি মোনাজাত করছেন, তাঁর পাশে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সব নেতা। গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নেই। হাইকোর্টের বিচারপতি গাইবান্ধায় ভোট করতে গেছেন। পল্লবীতে জসিম মোল্লা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতা হচ্ছেন ওরাই, যারা আমাদের নেতাদের গুলি করে মেরেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে—তারাই হচ্ছে এখন আওয়ামী লীগের নেতা।’

আওয়ামী লীগের সমর্থক কারা, এ প্রশ্ন তুলে সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘ওদের সমর্থক হচ্ছে দখলদার, লুটপাটকারী, সন্ত্রাসী। এই যে বনানীতে আক্রমণ করল—এরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থক। কারণ, ওরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে কারণে ওদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আজকে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছে, যে  কারণে তারা বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।’

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘বিবিসির দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের গুম–খুনের ওপর। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন কোনো গুম, খুন হচ্ছে না। এগুলোর কোনো প্রমাণ নেই, তথ্য নেই। আমীর খসরু প্রশ্ন তোলেন, এটা কি বাংলাদেশের কেউ বিশ্বাস করে?, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কেউ বিশ্বাস করে? বিশ্বাস করলে এ প্রশ্নটা ওনাকে করত? এ প্রশ্ন শেখ হাসিনাকে কেন করল, বোঝার বাকি আছে?’

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। তিনি প্রতিবাদী কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ও সাহসী ভূমিকার উল্লেখ করে বলেন, ‘এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এই ধারা থামানো যাবে না। বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমেছে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’গত শনিবার রাজধানীর বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালান। আজ মহাখালীর সমাবেশে বিএনপির অনেক নেতা–কর্মীর হাতে লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকা দেখা যায়।হাত ও মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে সমাবেশে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। গত শনিবার রাতে তিনি বনানীতে আওয়ামী লীগের হামলায় আহত হন।

তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজকে আপনাদের কাছে আমার আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনাদেরসহ পুরো বাংলাদেশকে দেখানো যে যতই আমাদের মাথা ফাটুক, যতই হাত ভাঙুক, বিএনপির প্রত্যেক কর্মী মাঠে আছে, থাকবে। যতক্ষণ না আমরা এ সরকারকে হারিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’ তিনি বলেন, ‘কোনো কঠিন কিছু অর্জন করতে হলে ত্যাগ ও বিসর্জন ছাড়া অর্জন করা যায় না। আমি ত্যাগ-বিসর্জন করতে প্রস্তুত আছি। আশা করি আমরা সবাই প্রস্তুত আছি।’ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন আলম, আনিসুর রহমান তালুকদার, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আনোয়ার হোসেন, এস এম জিলানী প্রমুখ।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button