এশিয়াক্রিকেটখেলা

সেমিফাইনালের স্বপ্ন আরেক দফা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান

হারলে বাদ। জিতলে বেঁচে থাকবে সেমির স্বপ্ন। বিশ্বকাপে এমন কঠিন সমীকরণ মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান। বাঁচা-মরার সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি বাবর আজমদের। সুপার টুয়েলভের গ্রুপ টুয়ের ম্যাচে সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বৃষ্টি আইনে ৩৩ রানে পরাজিত করেছে বাবর আজম শিবির। এই জয়ে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত টিকে থাকল দলটি। অন্যদিকে সেমিতে যাওয়ার অপেক্ষা বাড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার।

শাদাব খানের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সিডনিতে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডিএলএস পদ্ধতিতে ৩৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন আরেক দফা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান। গ্রুপ ‘২’-এর লড়াই তাই জমে উঠল আরেকটু। শেষ রাউন্ডের আগে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস ছাড়া সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বাকি চার দলেরই।

গ্রুপ টুয়ে চার ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ভারত। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। চার ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে পাকিস্তান। চার পয়েন্ট নিয়েও নেট রান কম থাকায় চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ।

টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৮৫ রান করে পাকিস্তান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৯ রান করার পর সিডনিতে শুরু হয় বৃষ্টি। ম্যাচ নেমে আসে ১৪ ওভারে। দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন টার্গেট নির্ধারণ হয় ১৪২ রান। সে লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রোটিয়ারা তুলতে পারে ৯ উইকেটে ১০৮ রান।

আগে ব্যাট করা পাকিস্তানের স্কোর একসময় ছিল ১৩ ওভারে ৫ উইকেটে ৯৫। সেখান থেকেই তাদের ১৮৫ পর্যন্ত টেনে তোলে শাদাবের ২২ বলে ৫২ এবং ইফতিখার আহমেদের ৩৫ বলে ৫১ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় শুরুতে উইকেট হারালেও টেম্বা বাভুমা ও এইডেন মার্করামের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

নিজের প্রথম ওভারে এসেই এরপর জোড়া আঘাত করেন শাদাব। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ডিএলএসে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন লক্ষ্য ছিল ১৪ ওভারে ১৪২, ৩০ বলে তাই প্রয়োজন ছিল ৭২ রান। বিরতির পর প্রথম ১০ বলে ২৫ রান তুললেও এরপর পাকিস্তান পেসারদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, আটকে গেছে ১০৮ রানেই।

১৮৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরু থেকেই ছিল বিপর্যয়ে। বৃষ্টির পর নতুন টার্গেটেও খুব একটা চমক দেখাতে পারেনি পাক বোলারদের সামনে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ব্যাট থেকে। কুইন্ট ডি কক ও রাইলি রুশো ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের রান।

মাঝে এইডেন মার্করাম (২০), হেইনরিচ ক্লাসেন (১৫) ও ট্রিস্টান স্টাবস (১৮) কিছুটা আশা জাগালেও লোয়ার অর্ডারে সবাই ছিলেন ব্যর্থ। বল হাতে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ব্যাট হাতে ঝোড়ো ফিফটি ও দুই উইকেট নেয়ার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন পাকিস্তানের শাদাব খান।

হারিসের আগে-পরে ফিরেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো স্টাম্পে বল ডেকে আনেন রিজওয়ান। বাবর ভুগেছেন আজও, লুঙ্গি এনগিডিকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৫ বলে পাকিস্তান অধিনায়ক করেছেন মাত্র ৬ রান। পাওয়ার প্লের পরপরই আনরিখ নর্কিয়ার স্লোয়ারে মিড অফে ক্যাচ তোলেন শান মাসুদ, ৪৩ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

ওয়ান ডাউনে নামা মোহাম্মদ হ্যারিস খন্ড ঝড় তুলে বিদায় নেন নরটজের বলে। ১১ বলে দুই চার ও তিন ছক্কায় ২৮ রান করেন হ্যারিস। এরপর বিদায় নেন অধিনায়ক বাবরও। এনগিডির বলে রাবাদার হাতে ক্যাচ দেয়া পাক অধিনায়ক ১৫ বলে করেন মাত্র ৬ রান।

পাকিস্তানের স্কোর সমৃদ্ধ হয় মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ঝড়ে। নরটজের বলে ২ রান করে শান মাসুদ আউট হওয়ার পর হাল ধরেন ইফতিখার ও মোহাম্মদ নওয়াজ। ২২ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ২৮ রান করে শামসির বলে এলবিডব্লিউ হন নওয়াজ।

১৪তম ওভারের প্রথম বলে ওয়েইন পারনেলের মাথার ওপর দিয়ে ছয় মারলেন ইফতিখার, এরপর পাকিস্তান চালিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। ইফতিখার ও শাদাবের জুটিতে ৩৬ বলেই ওঠে ৮২ রান। ৩৩ বলে ফিফটি করার পথে এনগিডিকে মিডউইকেট দিয়ে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে লম্বা ১০৬ মিটারের ছয়টি মারেন ইফতিখার।

শাদাব খান ফিফটি পূর্ণ করেন ২০ বলে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের যা দ্বিতীয় দ্রুততম। ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে মারেন ৪টি ছক্কা। বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও ওই সময় খেই হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ৮ বলে অবশ্য ৮ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান, তবে শেষ ১০ ওভারে তারা তোলে ১১৭ রান।

ব্যাটিংয়ের মোমেন্টাম বোলিংয়েও টেনে আনে পাকিস্তান। শাহিন শাহ আফ্রিদি নতুন বলে উইকেটের দেখা পান আবারও, প্রথম ওভারে তাঁকে ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন কুইন্টন ডি কক। পরের ওভারে আফ্রিদি আঘাত করেন আবার, অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে ব্যাট চালিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে নাসিম শাহর হাতে ধরা পড়েন রাইলি রুশো। সর্বশেষ ৫ ইনিংসে রুশোর এটি তৃতীয় শূন্য (বাকি ২ ইনিংসে সেঞ্চুরি)।

বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৪ ওভারে ৪১ রানে চার উইকেট নেন এনরিখ নরটজে। একটি করে উইকেট নেন ওয়েন পার্নেল, ক্যাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি ও তাবারেজ শামসি।

সিডনিতে বৃষ্টিবিঘ্নিত বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৯৯২ সালের সেই স্মৃতি। এবার আর অদ্ভুত কোনো সমীকরণের সামনে পড়তে হয়নি তাদের, তবে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথটা আরেকটু জটিল হয়েছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button