অপরাধএক্সক্লুসিভখুলনাজাতীয়ফরিদপুরবাংলাদেশ

বেরিয়ে আসছে খুলনার ‘নিখোঁজ’ রহিমা বেগমের অপহরণ নাটকের অজানা সব তথ্য

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসছে খুলনার দৌলতপুরের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নারী রহিমা বেগমের অপহরণ নাটকের সব অজানা তথ্য। ময়মনসিংহের মরদেহ উদ্ধার থেকে ফরিদপুরে আত্মগোপন সব খবরই জানতেন তাঁর মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও পরিবারের সদস্যরা।

‘জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা বেগম’- এমন অভিযোগ রহিমাকে অপহরণ মামলায় আটক ৫ জনের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর। প্রশ্ন উঠেছে, আত্মগোপনে থেকে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর এমন আয়োজন করেছিলেন তিনি! উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টা পর রহিমা বেগম দাবি করেছেন, তাঁকে অপহরণ করা হয়। তবে তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, তাঁর বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।

খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগম অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা থেকে উদ্ধার হন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব জানান, শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় রহিমা বেগম যে বাড়িতে ৭ দিন আত্মগোপনে ছিলেন সেই বাড়ির তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনার পুলিশ থানা হেফাজতে নিয়েছে। তাঁরা হলেন- বাড়ির মালিক কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হিরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৫)। তাঁরা এখন খুলনা পিবিআইর জিম্মায়। কুদ্দুস মোল্লা বর্তমান বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুট মিলের একজন কর্মচারী।

এদিকে, রহিমা বেগমকে তাঁর মেয়ে আদুরির জিম্মায় জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় খুলনা মহানগর হাকিম সারওয়ার আহমেদ ২২ ধারায় রহিমার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এই ঘটনটি নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে। রহিমা ও তাঁর মেয়ের বক্তব্যে অনেক অসংলগ্নতা আছে।

বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার ভাগনে জয়নাল জানান, আমার মামা কুদ্দুস খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গা এলাকার সোনালি জুট মিলে চাকরির সুবাদে খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

আমি ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি জানতে পারি। তারপর ওই ছবিটি রহিমা বেগমকে দেখিয়ে বলি, এটা আপনার ছবি কিনা; ওই সময় রহিমা বেগম হতভম্ব্ব হয়ে বলেন, আমার ছবির মতোই তো লাগছে।

এরপর তাঁর মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুটি মোবাইল নম্বরে (০১৭৭১১০০২০২, ০১৫৫৮৩৪৯৯০৫) যোগাযোগ করলে রহিমা বেগমের ছেলে মো. সাদী ওরফে মিরাজের স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। রহিমা বেগমের বিষয়টি তাঁদের বললে তাঁরা ওই নম্বরে আর ফোন দিতে নিষেধ করেন।

তারপর থেকে আমার সন্দেহ হলে রহিমা বেগমকে না জানিয়ে তাঁর বিষয়টি শনিবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনার ২ নম্বরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমই ওই নারী।

বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার পূর্বপরিচিত। রহিমা বেগমকে না জানিয়ে আমরা কাউন্সিলর সাইফুলকে সবকিছু খুলে বললে তাঁরা খুব দ্রুত রহিমা বেগমকে নিয়ে যাবেন বলে জানান। রহিমা বেগম যাতে পালিয়ে না যান সে বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে বলেন কাউন্সিলর। পরে শনিবার রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমা বেগমকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গাড়িতে করে আনার সময় রহিমা বেগম কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন এবং ২৮ দিন কোথায় কোথায় ছিলেন সে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেননি। রাতে থানায় আনার পর প্রশ্ন করলেও তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।

গতকাল দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও মুকসুদপুর ঘুরে ১৭ আগস্ট ফরিদপুরে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান। ৭ দিন ওই বাড়িতেই ছিলেন তিনি।পুলিশ সুপার বলেন, গত কয়েক দিন মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে অনেক পোস্ট দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। একটি সোর্স থেকে শুনেছি, রহিমা তার ছেলে-মেয়ে ও স্বামী কারও সঙ্গেই দেখা করতে চান না এবং কারও কাছেই যেতে চান না।

স্থানীয়রা জানান, রহিমা বেগমের স্ব্বামী আবদুল মান্নান হাওলাদার ২০১১ সালের ৭ আগস্ট মারা যান। রহিমার ঘরে তার ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকায় মান্নানের জমির পরিমাণ ১৯ দশমিক ৩৪ শতক। মান্নানের আগের স্ত্রীর ২ ছেলে মিজান ও কবীর ২০১৯ সালে গোলাম কিবরিয়া ও মহিউদ্দিনের কাছে মোট ৪ দশমিক ৮৬ শতক জমি বিক্রি করেন। গোলাম কিবরিয়া ও মহিউদ্দিন ওই জমিতে দখলে যাওয়ার চেষ্টা করলে রহিমা বেগম ও তাঁর সন্তানদের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ শুরু হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান নাটকবাজ। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে। সে মাদকাসক্ত। ময়মনসিংহে গিয়েও মরিয়ম নাটক সাজায়। এ মামলায় আটক হেলাল শরীফের মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী আন্তারা ফাহমিদা বলে, তার বাবা কোনো অপরাধ করেনি, অথচ তারপরও তাকে জেল খাটতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা নানা কটূক্তির শিকার হয়েছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button