অপরাধপরিবার ও দাম্পত্যবরিশালবাংলাদেশ

পুলিশের কনস্টেবল স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে পরিবারকে খবর দেন

বরিশাল নগর থেকে গত সোমবার উদ্ধার হওয়া বিএম কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া সাথীকে (২৪) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। এ ঘটনায় সাদিয়ার বাবা সিরাজুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সাদিয়া বরিশাল বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত সোমবার দুপুরে বরিশাল নগরের বৈদ্যপাড়া এলাকার একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ভাড়া বাসা থেকে সাদিয়া সাথীর লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ।

প্রতিবেশীরা বলেন, সোমবার সাদিয়া তাঁর আগের স্বামীর ঘরের আট বছর বয়সী মেয়েকে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। দীর্ঘক্ষণ সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দিলে বেলা একটার দিকে বরিশাল কোতোয়ালি থানার পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে।

পরিবারের অভিযোগ, সাদিয়ার স্বামী পুলিশের কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম সাদিয়াকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে পরিবারকে খবর দেন। এরপর তিনি আত্মগোপন করেছেন। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে হত্যা মামলা রেকর্ড করা হবে।

সাদিয়ার পরিবার জানায়, সাদিয়ার স্বামী মাইনুল ইসলাম পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে বরিশাল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।পরিবারের সদস্যরা আরও বলেন, সাদিয়ার বেশ কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। এরপর বনিবনা না হওয়ায় ওই স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সেখানে এক মেয়ে রয়েছে।

এক–দেড় বছর আগে সাদিয়া ও মাইনুল পরিবারের অমতে বিয়ে করেন। ওই সময় মাইনুল নিজেকে পুলিশের উপপরিদর্শক পরিচয় দিলেও পরে সাদিয়া জানতে পারেন, মাইনুল আসলে কনস্টেবল। এ নিয়ে বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই দুজনের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে কলহ শুরু হয়। এরপর প্রায়ই সাদিয়াকে মারধর করতেন মাইনুল। বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর সম্প্রতি সাদিয়া আলাদা বাসায় মেয়েকে নিয়ে থাকতেন।

সাদিয়ার ভগ্নিপতি ও বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম ব্যাপারী বলেন, সাদিয়া আত্মহত্যা করবেন, এমন কোনো কারণ তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। মাইনুল কিছুদিন আগে সাদিয়াকে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৩ লাখ টাকা নেন।

চাকরি না হওয়ায় ওই টাকা ফেরত চান সাদিয়া। আট লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা দেননি মাইনুল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ ছিল। রোববার মাইনুল বাসায় গিয়ে সাদিয়াকে মারধর করেছেন বলেও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

সাদিয়ার বাবা সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আত্মহত্যা করলে সাদিয়ার ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা পেয়েছেন। সাদিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সাদিয়ার সঙ্গে স্বর্ণালী নামে আরেকজন মেয়ে সাবলেট থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তাঁকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক রেজাউল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় তাঁরা জানতেন না মাইনুল পুলিশে চাকরি করেন। পরে বিষয়টি জেনেছেন। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সকালে সাদিয়ার লাশ তাঁর বাবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ভুতেরদিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button