অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশরাজশাহীশিক্ষাঙ্গন

রুয়েট উপাচার্য শুধু ভাই বোন নয় বাসার গৃহকর্মীকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী দিয়েছেন

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাইসহ বেশ কয়েকজন স্বজনকে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সভার কোনও রেজল্যুশন করা হয়নি।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, স্বজনপ্রীতি ও নীতিবহির্ভূত নিয়োগ আড়াল করতেই ওই সিন্ডিকেট সভার রেজল্যুশন করা হয়নি।

এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। দুপুর ১টার দিকে রুয়েটের জনসংযোগ দফতরে গেলে কর্মকর্তারা জানান, উপাচার্য ক্যাম্পাসে নেই। তিনি ঢাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে।তবে উপাচার্যের দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, উপাচার্য ক্যাম্পাসে আছেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চান না।

রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় এই পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালে ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় ওই তিনটি বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে উপাচার্য তার শ্যালক সোহেল আহমেদকে পিএ টু ডিরেক্টর, দুই ভাই মো. মুকুল হোসেনকে সেকশন অফিসার ও লেবারুল ইসলামকে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

এছাড়া গৃহকর্মী লাভলী আরাকে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক পদে। উপাচার্যের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসানকে কেয়ারটেকার পদে, চাচাতো বোন মাছুমা খাতুনকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে, গৃহকর্মী লাভলী আরার স্বামী এনামুল হককে উপাচার্যের গাড়িচালক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের ভাই লেবারুল আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, রফিকুল ইসলাম সেখ ২০১৮ সালে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রথম দিকে ভালোভাবেই প্রশাসন চালিয়েছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে নিয়োগ ও কনস্ট্রাকশন কাজের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও তিনি নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যান। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা পদের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দেন। যেখানে আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগের রেজল্যুশন করেননি তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে ভিসিদের ভাষ্য, তারা নিয়ম মেনে নিয়োগ দিয়েছেন। যদি সিন্ডিকেট হয়ে নিয়োগ হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে অনিয়মের অভিযোগ পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা তদন্ত করে দেখতে পারবো।

নাম প্রকাশ করার না শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, বর্তমান উপাচার্য বরাবরই একাডেমিক কার্যক্রমের চেয়ে নিয়োগের প্রতি আগ্রহী বেশি। ভাইবোনকে চাকরি দেওয়ার পরও মেয়াদের শেষ সময়ে এসে আরও নিয়োগ দিতে মরিয়া। এজন্য সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন তিনি।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button