অপরাধআওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভবরিশালরাজনীতি

বরিশালে বাসস্ট্যান্ডের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুজনকে কুপিয়ে জখম

বরিশাল নগরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় এবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী শ্রমিকেরা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-কোচ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমন মোল্লা (৪০) ও তাঁর সহযোগী আল আমিনকে (২৫) কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর ও সভাপতিসহ ১৫ জনকে মারধরের পর আজ সকালেই রূপাতলী মিনিবাস টার্মিনাল পুরোপুরি দখলে নেয় মেয়রের অনুসারীরা। তিন শতাধিক শ্রমিক ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে আসেন। বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শাহরিয়ার ওরফে বাবুর নেতৃত্বে তাঁদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।

সুমন মোল্লার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুমন মোল্লা মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। এ ছাড়া তিনি হাতে আঘাত পেয়েছেন।সুমন মোল্লার স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, আজ সন্ধ্যায় ইফতার করতে সুমন বাড়িতে আসেন।

ইফতারের ৬-৭ মিনিট আগে যখন তিনি বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখন ২৫ থেকে ৩০ জন অস্ত্রধারী তাঁকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে কোপাতে থাকে। তখন সুমনের সঙ্গে থাকা আল আমিন তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় সুমনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয় এবং পাশের আরও দুটি বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

অভিযোগের বিষয়ে মেয়রের অনুসারী ‘বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস রাত পৌনে ৯টার দিকে বলেন, ‘আমরা আজ রূপাতলী এলাকায় যাইনি। তাই এটা কারা করেছে, সে ব্যাপারে কিছুই জানি না। কেউ অভিযোগ করলেই সেটা সত্য হয়ে যায় না। ওখানে কী ঘটেছে, সেটা আমাদের জানা নেই।’

আইরিন আক্তারের অভিযোগ, মেয়রের নির্দেশে তাঁর লোকেরাই এ হামলা চালিয়েছে। তিনি এ হামলার বিচার চান। সুমন মোল্লার মা সেতারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে তাঁর ছেলের ওপর এ হামলা হয়েছে।

এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে মেয়রের অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকেরা প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও তাঁর পক্ষের ১৫ জন শ্রমিক আহত হন। আহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন শ্রমিক রফিকুল ইসলাম, রিজন হাওলাদার, শামীম হাওলাদার, বিপ্লব হাওলাদার, সালাম মিয়া, মিজানুর রহমান, মো. শাওন, ফারুক হোসেন। বাকি ছয়জনের পরিচয় জানা যায়নি।

শ্রমিকদের একটি সূত্র জানায়, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নিয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর আগে শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নিয়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করে।

এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা মেয়রের অনুসারী কমিটিকে অবৈধ ও নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। মেয়রের অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শাহরিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তাঁদের ঘোষিত কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সুমন মোল্লা।

শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে এ হামলা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাঁরা কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি। তিনি বলেন, ‘রোববার দুপুরে আমি শ্রমিকদের নিয়ে ইউনিয়নের কার্যালয়ে বসেছিলাম।

আকস্মিকভাবে মেয়রের অনুসারী কথিত শ্রমিকেরা দুই শতাধিক সশস্ত্র বহিরাগত নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালান। এ সময় কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিল, আলমারিসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করা হয়। প্রতিমন্ত্রীর ছবিও ভাঙচুর করা হয়। এ হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন।’

সুলতান মাহমুদ আরও বলেন, ওই একই ব্যক্তিরা মেয়রের নির্দেশে আজ সুমন মোল্লার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। তাঁর বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সারা দিন রোজা রাখার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুমন। এ সময় সশস্ত্র ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালায়।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা রাত ৯টার দিকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। ঘটনার তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button