এক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশ

বিভিন্ন কারণে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে যেতে পারে

সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতু এ বছরের ৩০ জুন চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এর কদিন পর গত ৩ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে। ওই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। তাই বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু কবে চালু হবে- তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

কারণ বছরখানেক ধরে বলা হচ্ছে, ২০২২ সালের জুনেই চালু হবে। সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর কেন পদ্মা সেতু চালু পিছিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নও উঠেছে। এ নিয়ে নানা পর্যালোচনা থাকলেও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ঘোষণাটি আসায় সংশ্লিষ্টদের কেউই উদ্ধৃত হয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন।

গত রবিবারের পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। যিনি এ পদে আসার আগে আট বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলেন। এ হিসেবে ছিলেন পদ্মা সেতুর নির্মাণ তদারকির দায়িত্বেও। তিনি গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সেতুর নির্মাণকাজের জন্য কিছু সরঞ্জাম আসে ইউরোপ থেকে। ইউক্রেনে হঠাৎ করে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ায় সেসব সরঞ্জাম আনায় বিঘ্ন ঘটছে।

পরে এ ব্যাপারে জানতে ফোন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পদ্মা সেতুর কাজ পিছিয়ে গেছে এমন কথা তিনি বলেননি। যুদ্ধের কারণে সামগ্রিকভাবে আমদানিতে বিঘ্ন ঘটছে, তা বলেছেন। তিনি বলেন, আমি বলেছি, অনেক জিনিস, অনেক মালামাল আসতে দেরি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর মালামাল আসা বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, পদ্মারও হতে পারে। সব কিছুরই মালামাল আসতে দেরি হচ্ছে।

আগামী ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর কথা রয়েছে। এখন পদ্মা সেতুও একই দিনে চালুর চিন্তা আছে কিনা- তা ভাবছেন কেউ কেউ। অনেকেই বলছেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ বড় অর্জন হিসেবে বিজয় দিবসে উদযাপন করা হতে পারে।

আবার অনেকে বলছেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল একইদিনে দোতলা পদ্মা সেতুতে বাস ও ট্রেন চলবে। কিন্তু পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু হয়। ফলে কাজের বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের আগে সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। কারণ আগামী জুলাইয়ে রেলপথ বসানোর কাজ শুরু হবে সেতুর নিচ তলায়।

ওপরে বাস-ট্রাক চলতে থাকলে নিচ তলায় রেল ট্র্যাক বসানোর কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চিঠি চালাচালিও চলছিল। জুলাইয়ে রেলপথ বসানো শুরু করলেও ছয় মাসের আগে কাজটি শেষ করা যাবে না বলে লিখিতভাবে সেতু কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন রেলসংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এসব নানা যুক্তি দেখা হচ্ছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়ার আলোচনায়।

এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৩১ মার্চের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর পরও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রত্যাশিত ভৌত ও আর্থিক অগ্রগিত অর্জিত হয়েছে। তবে বিদেশি পরামর্শক ও চীনা ঠিকাদারের বিশেষজ্ঞদের কাজে নিয়োজিত করতে সমস্যা হচ্ছে করোনায়। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এখনও স্বাভাবিক না হওয়ায় আমদানি করা সামগ্রী যথাসময়ে আসছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে, এমন কিছু বলা হয়নি ওই প্রতিবেদনে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চার লেনের সেতুর দুই লেনের কার্পেটিং কাজ শেষ। বাকি দুই লেনেরও ওয়াটার কোটিং, কালার কোটিং শেষ। এ মাসেই কার্পেটিং শেষ হবে। গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজও শেষ হবে। এখন পাইপলাইনে পানি ভরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেতুতে ২৮১টি ল্যাম্পপোস্ট বসেছে। ৮৬টি বসানো বাকি। যা কাজ বাকি তা মে মাসেই শেষ হবে। জুনেই সেতু চালু করা সম্ভব।

গত রবিবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে সভার পর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ৩১ মার্চ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৯৭ শতাংশ। নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৫ ভাগ। মূল সেতুর ওপর সড়ক নির্মাণ তথা কার্পেটিংয়ের কাজ হয়েছে ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সেতুর নিচতলায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ৯৯ ভাগ এগিয়েছে।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, সেতু কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল, গাড়ি চললে কম্পন হতে পারে। সেতু চালুর পর রেললাইন স্থাপন করতে হলে সেতুতে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেতু জুনের বদলে বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে কিনা এ বিষয়ে তিনি কোনো নির্দেশনা পাননি। ঠিক কী কারণে পেছাচ্ছে বা আসলেই কবে সেতু উদ্বোধন হবে তা সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পদ্মা সেতুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) বরাতে রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালককে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুর কাজ শেষে ১ জুলাই থেকে রেলট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু করা যেতে পারে।

আর গাড়ি চলাচলে সৃষ্ট কম্পনে রেললাইন স্থাপনে জটিলতার আশঙ্কার বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পিডি চিঠিতে রেলকে জানান, এ বিষয়ে সেতুর নকশা করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এইসিওএমের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এইসিওএম এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। তবে কম্পনের কারণে রেললাইন স্থাপনের কাজ বিঘিœত হবে না বলে আলোচনায় মতামত এসেছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button