অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশশিক্ষাঙ্গনসাভারসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

জাবি’তে সাবেক ভিসিপুত্রের মদ খাওয়ার ছবি ভাইরাল

কক্ষের মেঝেতে দাঁড়িয়ে মদের বোতলে চুমুক দিচ্ছেন এক তরুণ। বিদেশি ব্রান্ডের মদ ভর্তি থাকা বোতলে চুমুক দেয়ার এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল। রীতিমতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘টক অব দ্যা ক্যাম্পাসে’ পরিণত ছবিটি।

আর ছবিটির ওই মদ্যপ ছেলে আর কেউ নন স্বয়ং জাবির সাবেক আলোচিত ভিসির একমাত্র পুত্র প্রতীক হাসান। সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। এই অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছে।

জাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর তার পেজে ছবিটি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘এই পরিবারটা (ভিসি ফারজানা) এতই বেপরোয়া ও দানব হয়েছে যে, জাতির পিতা ও নেত্রীর ছবির সামনেও এসব (মদপান) করার সাহস পায়!’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এলাকায় সাবেক ভিসিপুত্র প্রতীকের মদের বোতলে চুমুক দেয়ার ছবিসহ পোস্টার দেখা যায়। ‘জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের’ ব্যানারে এ পোস্টারে ভিসিসহ তার স্বামী ও পুত্রকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তাদের বিচার চাওয়া হয়েছে।

পোস্টারে একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির টাকায় উপাচার্য ভবন হয়ে ওঠে অপসংস্কৃতি, লাম্পট্য ও মাটকাসক্তির কেন্দ্র’। অপর একটি মদ্যপ ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লেখা আছে- ‘নিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্যের হোতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অবৈধ হস্তক্ষেপকারী ফারজানাপুত্র প্রতিক, স্বামী আখতারসহ ফারজানা ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

বিদেশি ব্যান্ডের মদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যের অফিসে কীভাবে পৌঁছালো এ নিয়ে এই প্রতিবেদক অনুসন্ধান চালায়। কথা বলা হয় সাবেক উপাচার্যের ঘনিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে। এছাড়া সাবেক ভিসির স্বামী আখতার হোসেন ও পুত্র প্রতীক হাসানের ঘনিষ্টজনদের সঙ্গে প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী আলাপচারিতায় তাদের নেশা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খতিয়ান উঠে আসে।

ক্যাম্পাসের কোনো শিক্ষক যদি উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ যেতে ভিসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ (দোয়া) নিতে যান, তখন ভিসির স্বামী তাকে বিদেশি ব্রান্ডের মদ আনার জন্য বলেন। অনুসন্ধান বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ-সালাম বরকত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার ভিসির স্বামীর ও ছেলের মদ সরবরাহ করেন। অধ্যাপক আজমের পরিবার জাপানে অবস্থান করায় তিনি মাঝে মাঝে জাপানে যান। আর আসার সময় বিদেশি মদ নিয়ে আসেন।

একজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, ভিসির স্বামী এক সরবরাহকারী থেকে এক চালানে চার বোতল বিদেশি মদ গ্রহণ করেন। সহকারী প্রক্টরের ভাষ্য, সাভারের নবীনগর সেনা একটি শপিং কমপ্লেক্সে একটি দোকান থেকে জাবির পরিসংখ্যান বিভাগের ও শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী ভূয়া পরিচয় দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার কেনাকাটা করে।

বিল পরিশোধের সময় সে ভূয়া পরিচয় দিলে তার কথাবার্তায় অসংলগ্ন থাকায় শেষমেষ গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়ে যায়। পরে শপিং কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি রুমে তাকে বেধড়ক মারধর করার পরে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডিকে অবহিত করা হয়।

ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতির কিছুক্ষণ পরে সেখানে উপস্থিত হন ওই প্রতারক শিক্ষার্থীর দুলাভাই। প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময়ই তার দুলাভাই বলে ‘ও! আপনারা জাবি ক্যাম্পাসের? গতকালই তো আপনাদের ভিসির স্বামীর কাছে ৪ বোতল বিদেশি মদ সাপ্লাই দিয়ে আসলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের এক ড্রাইভার বলেন, ‘ঢাকা থেকে অধ্যাপক আলী আজমের মদ নিয়ে আসার সময় এক সার্জেন্ট মদসহ গাড়ি আটক করে রেখেছিল। পরে আজম স্যার উপর মহল থেকে ফোন দিয়ে গাড়িটি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।’ মদ বহন করার জন্য অধ্যাপক আজম পরিবহন পুলের- ঢাকা মেট্রো-গ-৩১৫৫ এবং ঢাকা মেট্রো-চ-৩৩১৫ নং গাড়ি ব্যবহার করতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান গনমাধ্যমে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মারফতে ছবিটি আমিও দেখেছি। তবে এটি সাবেক ভিসি ও তার পরিবারের পারিবারিক বিষয়। তাই এ বিষয়ে আমি অন্য কোনো মন্তব্য করবো না।

সাবেক ভিসির স্বামী ও ছেলের কাছে কারা মদ সরবরাহ করে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টোর বলেন ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’  এসব বিষয়ে জানতে সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলাম ও তার পুত্র প্রতিক হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে সাবেক ভিসির স্বামী আখতার হোসেন ফোন রিসিভ করার পরে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তার নিজের পরিচয় অস্বীকার করে শুধু ‘না না’ বলে ফোন রেখে দেন। তবে ভিসির স্বামীকে মদ সরবরাহ করার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী আজম বলেন, এইসব অভিযোগ মিথ্যা।

যারা এসব অভিযোগ করেছে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। আর আমার বাসায় কোনোদিনও সাবেক ভিসির স্বামী, পুত্র আসেননি। আর তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ড্রাইভিং করার সময় পদ পান করার অভিযোগ আছে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মগে করে আমি ব্লাক কফি পান করি।’’

ভিসির বাসভবনে দায়িত্বপালনকারী একটি সূত্র বলেন, অফিসে বসে সাবেক ভিসির ছেলের মদ খাওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার পরে ভিসির বাসভবন থেকে অনেকগুলো মদের বোতল বাহিরে পাঠানো হয়েছে।’ ‘ভিসির বাসায় যে কোনো সময় তল্লাশি চালানো হতে পারে এমন ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে রাতের আধারে গাড়িতে করে বোতলগুলো সরানো হয়েছে। 

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button