অপরাধআমেরিকাএক্সক্লুসিভবাংলাদেশবিশ্ব সংবাদ

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ছাত্রীর মৃত্যুর ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য মানতে রাজি নন অভিভাবক

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হান্টার কলেজের বাংলাদেশি ছাত্রী জিনাত হোসেনের (২৩) মৃত্যুর ব্যাপারে নিউইয়র্ক পুলিশের বক্তব্য মানতে রাজি নন অভিভাবকেরা।পরিবারের পক্ষে তার নানা মো. কবীর গত শনিবার দুপুরে ব্রুকলীনে বায়তুল জান্নাহ মসজিদে অনুষ্ঠিত জিনাতের জানাজার সময় সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, “জিনাত আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশি রিপোর্টে বলা হয়েছে। কিন্তু এটা আমরা মনে করি না। ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ফল ফ্রম হাই’ অর্থাৎ ওপর থেকে পড়ে মৃত্যু। এটা আসলে ‘হেইট ক্রাইম’ (ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষমূলক হামলা)। এর প্রতিবাদে কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।” 

কমিউনিটির সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে সিটির অভিবাসী সমাজের নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হবার আহ্বান জানান।জিনাতের এমন মৃত্যুর সঠিক কারণ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তথা পুলিশের আচরণেরও সমালোচনা করেছেন অনেকে। কারণ, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ছিল। তবুও কেন কালক্ষেপণ, এ প্রশ্ন সকলের। 

জিনাতের নানা মো. কবীর জানান, ১৬ মে (সোমবার) দুপুরে সিটি মেয়র অফিস সংলগ্ন সিটি হলের সামনে প্রতিবাদ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সকলকে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে। তখন কফিনের পাশে ছিলেন জিনাতের বাকরুদ্ধ বাবা আমির হোসেন। তিনি কেবলই কফিন ছুয়ে মেয়েকে অনুভব করছিলেন।

জানাজা শেষে কফিন মসজিদের সামনে আনার পর জিনাতের মা জেসমীন হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়েন। হুইল চেয়ারে ছিলেন জেসমীন। তখন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মাজেদা উদ্দিন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একমাত্র কন্যার এমন মৃত্যুতে মা-বাবাসহ স্বজনের আহাজারিতে গোটা পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছিল। 

উল্লেখ্য, গত ১১ মে স্থানীয় সময় রাত ৯টার পর মেধাবি এই ছাত্রীর লাশ ম্যানহাটান থেকে ব্রুকলীনগামী ‘ডি’ ট্রেনের ৫৫ স্ট্রিট সাবওয়েতে পায় পুলিশ। জিনাত তার মা-বাবার সঙ্গে বাস করতেন অষ্টম এভিনিউ ও ৪২ স্ট্রিটে অবস্থিত বাসায়। বাসার কাছেই অবস্থিত পাতাল ট্রেনের লাইন থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

জিনাতের লাশের জানাজা শেষে নিউজার্সিতে বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির কেনা কবরে তাকে দাফন করা হয়। জিনাতের খালু ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গমাতা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডা. এনামুল হক জানান, তারা জিনাতের মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য নিয়ে পুলিশের লোকোচুরির প্রতিবাদে র‌্যালি, প্রেস কনফারেন্স করবেন। 

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জগতপুর গ্রামের আমির হোসেন ও জেসমীন হোসেন দম্পতির একমাত্র কন্যা জিনাতের এই মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নীরবতার সুযোগে ২০১৯ সালের একটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজকে জিনাতের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন জনৈক ব্যক্তি। এরপরই তা কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করা হয় যে, পাতাল ট্রেনের স্টেশনে অপেক্ষার সময় ছিনতাইকারী তার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে জিনাতকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের সামনে ফেলে দেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস শেষে রাত ৯টায় বাসায় ফিরতেন জিনাত। কিন্তু সেদিন রাত ১০টা নাগাদ জিনাত না ফেরায় তার মা পুলিশকে বিষয়টি জানান। রাত দেড়টায় পুলিশ জিনাতের খালু ডা. এনামুলকে মেয়ের লাশ উদ্ধারের খবর জানান। 

জানা গেছে, জিনাতের একমাত্র বড় ভাই আবিদ হোসেন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছেন। জিনাত তার মা-বাবার সঙ্গে ২০১৫ সালে ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তার পরিচিতজন ও কলেজের সহপাঠী অনেকে জানান, শান্ত স্বভাবের জিনাত আত্মহত্যা করবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তারা এটা বিশ্বাসও করেন না। আসলে জিনাত হেইট ক্রাইমের ভিকটিম হয়েছেন বলে ধারণা তাদের।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটিতে চলতি পথে অথবা ট্রেনের জন্য রেল স্টেশনে অপেক্ষমাণ এশিয়ানদের ওপর হামলার ঘটনা চরমে উঠেছে। এ অবস্থায় নাগরিকদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ১৬ মে দুপুরে সিটিহলের সামনে র‌্যালির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘সাউথ এশিয়ান আমেরিকান ফান্ড ফর এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ (স্যাফেস্ট)। এর প্রধান নির্বাহী মাজেদা উদ্দিন এ কর্মসূচিতে সকল প্রবাসীকে সপরিবারে উপস্থিত হবার অনুরোধ জানিয়েছেন। সকলে সমস্বরে আওয়াজ তুললেই দুর্বৃত্তরা ভয় পাবে অথবা পুলিশ প্রশাসন সোচ্চার হবে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button