অপরাধবাংলাদেশরাজশাহী

চাকরীর পাশাপাশি মাদকের নেশায় তিনি ছিনতাইও করেন

রাজশাহী শহরে চারতলা বাড়ি আছে ওয়াদুদ বুলবুলের (৩৬)। শিক্ষিত পরিবারের ছেলে তিনি। বাণিজ্যে স্নাতক পাস করে এখন একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। মাদকের নেশায় তিনি এখন ছিনতাই করছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রীর ব্যাগ ছিনতাই করার পর নগরের বোয়ালিয়া থানা-পুলিশ গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই করেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন ওয়াদুদ।

পুলিশের কাছে ওয়াদুদ স্বীকার করেছেন, শখ করে এক বন্ধুর সঙ্গে এক দিন ফেনসিডিল সেবন করেন। এরপর ইয়াবা। তারপর আর এসব ছাড়তে পারেননি। নেশার জগতে ঢুকে টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তাঁকে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের জগতে পা বাড়াতে হয়েছে।

ওয়াদুদের বাড়ি নগরের নওদাপাড়ায়। স্ত্রী-সন্তান আছে। বাবা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছিলেন। বাবার রেখে যাওয়া চারতলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে বাস করেন তিনি। পুলিশ বলছে, তিনি ভয়ংকর ছিনতাইকারী।

গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শাতিল সিরাজের স্ত্রী ইফফাত জাহানের ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতে ওয়াদুদকে গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওয়াদুদ জানান, তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। এক বোতল ফেনসিডিলের দাম এখন দুই হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিদিন তাঁর অন্তত ছয়টি ইয়াবা বড়ি দরকার হয়। প্রতিটির দাম ২৫০ টাকা। নেশার টাকা জোগাড় করতেই তাঁকে ছিনতাই করতে হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, ইফফাত জাহান রিকশায় চড়ে শহরের রেলগেট থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই মোটরসাইকেল নিয়ে ইফফাতের ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যান ওয়াদুদ। পরে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল রাতে লক্ষ্মীপুর মোড় থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় ওয়াদুদ ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেন। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ব্যাগ ও টাকা। তবে ইফফাতের মুঠোফোনটি পাওয়া যায়নি।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ইফফাত জাহানের ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছেন পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবক। ওয়াদুদ বলেন, জুমার নামাজের পর নেশার জন্য মাথাব্যথা করছিল। তখনই তিনি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে বের হন। তবে ধরা পড়বেন তা ভাবেননি। এর আগে ছিনতাই করলেও এবারই প্রথম ধরা পড়েছেন তিনি।

ওয়াদুদ বলেন, এর আগেও তিনি এভাবে ছিনতাই করেছেন। ছিনতাই হওয়া মুঠোফোন ব্যবহার করলে কিংবা বিক্রি করলে ধরা পড়ার ভয় থাকে। তাই ছিনতাই করা মুঠোফোন তিনি ড্রেনে ফেলে দেন। ইফফাত জাহানের মুঠোফোনটিও ড্রেনে ফেলে দিয়েছেন।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, নেশার টাকার জন্য অনেক ভালো পরিবারের সন্তানেরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ওয়াদুদও তাঁদেরই একজন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওয়াদুদ যেসব স্থান থেকে মাদক জোগাড় করতেন, সেগুলোরও সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে অভিযান চালানো হবে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button