দিনের বেলায় ফল বিক্রেতা,সবজি বিক্রেতা রাতের বেলায় দুর্ধর্ষ ডাকাত

দিনের বেলায় কখনো ফল আবার কখনো মৌসুমী সবজি বিক্রি করেন তারা। রাতের বেলায় দুর্ধর্ষ ডাকাত। সবজি বিক্রির আড়ালে ডাকাতির আগে টার্গেটকৃত স্থানে ফল বা সবজি বিক্রেতার ছদ্মবেশে এলাকা ও বাসা রেকি এবং ডাকাতির পরিকল্পনা করে।

ডাকাতি শেষে ঘটনাস্থল থেকে দূরে কোথাও আত্মগোপন করতো। সম্প্রতি এমনই এক সাজাপ্রাপ্ত এবং ডাকাতি ও অস্ত্র আইনের ৮ মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের ডাকাত সর্দার শহিদুল। ১০ থেকে ১২ সদস্যের নিজস্ব ডাকাত বাহিনী রয়েছে তার। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের ৮টি বিভাগে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় আসে এই ডাকাত সর্দার এবং চক্রের মূল হোতা শহিদুল মোল্লা। এর আগে রাজধানীর উত্তরায় মৌসুমী ফল ও সবজি বিক্রেতার বেশ ধরে বসবাস করে আসছিলেন। পাশাপাশি ডাকাতির জন্য এলাকা ও বিভিন্ন বাসা রেকি করে।

সূত্র জানায়, আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সর্দার শহিদুলের দক্ষিণাঞ্চলে নিজস্ব ডাকাত বাহিনী রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী ডাকাতি করে আসছিলো।

কোথাও ডাকাতির আগে সেই স্থানে ফল বা সবজি বিক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করে। এরপর এলাকা ও বাসা রেকি করে ডাকাতির পরিকল্পনা করতো। এ সময় স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদেরকে নিজস্ব সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে।

পরবর্তীতে অবস্থা এবং পরিবেশ বুঝে রাতের বেলায় হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর ডাকাত। ডাকাতি শেষে মূল্যবান জিনিসপত্র, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যন্ত কোনো অঞ্চল এবং নতুন স্থানে অবস্থান করে। সেখানে নতুন কোনো পেশায় নিজেকে যুক্ত করে আত্মগোপনে থাকে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত শহিদুল জানায়, তার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি ডাকাত দল রয়েছে। দলবলে বরিশালের উজিরপুর, বিমানবন্দর থানা, গৌরনদী, মাদারীপুরের কালকিনীসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করেছে।  

তার বিরুদ্ধে দু’টি ডাকাতির প্রস্তুতি, দুটি অস্ত্র আইনে মামলা, দু’টি চুরি, একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও একটি অন্য ধারার আইনের মামলা রয়েছে। ৭টি মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে যায়।

চক্রের সদস্যরা ডাকাতির ঘটনায় বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার শেষে কারাবাসের পর জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ডাকাত দল গঠন করে। নতুন উদ্যমে ডাকাতি শুরু করে। অনেকে আবার বড় ধরনের ডাকাতি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে দূরবর্তী এলাকায় অবস্থান করে। সেখানে সাময়িকভাবে নতুন পেশা হিসেবে কখনো দিনমজুর, কখনো ঘাস নিরানী, ভ্যানচালকের পেশা বেছে নেয়।

তাদের কেউ কেউ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় হাজির না হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সিআইডির এলআইসি শাখার অভিযানে গত সপ্তাহে রাজধানীর উত্তরা থেকে ডাকাত সর্দার ও ৮ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি শহিদুল মোল্লা গ্রেপ্তার শেষে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সিআইডি সূত্র জানায়, আদালত থেকে ৭টি মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর বলেন, সবজি বিক্রির আড়ালে দুর্ধর্ষ ডাকাত শহিদুল দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় তার সংঘবদ্ধ ডাকাত দল নিয়ে ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

সম্প্রতি রাজধানীতে আত্মগোপনে এসে উত্তরার একটি এলাকায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একই নিয়মে ছদ্মবেশে দিনের বেলায় সবজি বিক্রেতা হিসেবে রেকি করে। ডাকাত দলের মূল হোতা শহিদুলকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Exit mobile version