আপত্তিকর ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারণা, চারজন গ্রেপ্তার

বগুড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি এক কর্মকর্তার ‘আপত্তিকর ছবি’ তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাঁদের গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নাছির উদ্দিন (৩৬) নামের একজনকে প্রতারক চক্রের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সংসারদিঘি গ্রামে, তবে শহরের জহুরুলনগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি।

তাঁর বিরুদ্ধে আগে থেকেই থানায় মানব পাচার ও চাঁদাবাজির মামলা আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নাছির উদ্দিন গতকাল বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার বগুড়া সদরে মামলা করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই কৃষি কর্মকর্তা। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, চক্রটি তাঁকে কৌশলে অপহরণ করে আটকে রেখে নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছে। এরপর সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমানে শহরের ফুলতলা এলাকায় বসবাসকারী রুনা আক্তার (৪২), শহরের পূর্ব পালশা এলাকার বাসিন্দা আমেনা খাতুন ওরফে রেশমী (৪০), গাবতলী উপজেলার মহিষাবান সাতঘড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ও বর্তমানে শহরের কলোনী টনাপাড়া এলাকায় বসবাসকারী সেলিনা আক্তার ওরফে ঝিনুক মালা (৩৭)।ডিবি জানিয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের সময় চাঁদাবাজির নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং এ কাজে ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে তারা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ আরও জানান, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, হাতিয়ে নেওয়া অর্থের মধ্যে তিনি নিজে ৬ লাখ ১৭ হাজার এবং তিন নারী সদস্য প্রত্যেকে ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, প্রতারণার শিকার অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তার বয়স ৬৫ বছর। তিনি বগুড়া শহরের ভান্ডারি সিটি এলাকায় বসবাস করেন। গত মার্চের দিকে শহরের রহমাননগর এলাকার একটি ডেইরি খামারে দুধ কিনতে গিয়ে সেলিনা আক্তার ওরফে ঝিনুক মালা নামের ওই নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর তাঁদের মধ্যে সখ্যও হয়। ওই নারী তাঁকে শহরের পূর্ব পালশা এলাকার আমেনা খাতুনের বাসায় নিয়ে যান।

সেখানে এরপর একটি ঘরে আটকে রেখে একজন নারীর সঙ্গে তাঁর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। এসব ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এক লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পান ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরে ধাপে ধাপে আরও ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।

আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে নতুন করে আরও ছয় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি প্রথমে পুলিশকে অভিযোগ দেন। পরে গত মঙ্গলবার বগুড়া সদর থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলা করেন। পরে পুলিশ চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে।

Exit mobile version