আইন-আদালতএক্সক্লুসিভঢাকাপরিবার ও দাম্পত্যবাংলাদেশরাজধানী

স্বামীর লাশ আট বছর ডিপ ফ্রিজে,দুই স্ত্রীর মীমাংসা না হওয়ায় লাশ শুকিয়ে যাচ্ছে

প্রায় ৭০ বছর বয়সী খোকনকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২০১৪ সালের ১৫ জুন। তিনি মারা যান ওই বছরের ২৬ জুন। প্রথমে তাঁর লাশ রাখা হয় বারডেমের হিমঘরে। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বারডেম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে।

একই বছরের ২৩ অক্টোবর সহকারী জজ আদালত (দেওয়ানি ২৫২/১৪ ঢাকা) এক আদেশে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে লাশটি সংরক্ষণের আদেশ দেন।দুই ধর্মের দুই স্ত্রী স্বামীর লাশের দাবিদার।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও এর মীমাংসা না হওয়ায় স্বামী খোকন ওরফে খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরী ওরফে খোকা চৌধুরী ওরফে রাজীব চৌধুরীর লাশ আট বছর ধরে হিমঘরের ফ্রিজে রয়েছে। হাবিবা হলেন খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম মিরা নন্দী।

‘আট বছর হলো স্বামীর লাশ মর্গের ফ্রিজে। সাত থেকে আট মাস আগে একবার দেখতে গিয়েছিলাম, লাশ শুকিয়ে গেছে। বিকৃত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যাবেই তো, আর কত দিন ভালো থাকবে? স্বামীর দুই স্ত্রীর মধ্যে যে–ই পাই না কেন, এখন লাশের একটা গতি হওয়া জরুরি।’কথাগুলো বললেন হাবিবা আকতার খানম।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজেরও বয়স হয়েছে। আমি চাই আইনি ঝামেলা মিটে যাক, কিন্তু আমি চাইলে তো হবে না, অপর পক্ষ মামলার নিষ্পত্তি চায় না। তাই স্বামীর লাশ আর কত দিন ফ্রিজে থাকবে, তাই এখন বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।’ 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সহকারী সেকান্দার বললেন, দীর্ঘদিন ডিপ ফ্রিজে থেকে খোকন নন্দীর লাশ শুকিয়ে যাচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময় ফ্রিজ নষ্ট হয়েছে। তখন লাশ সংরক্ষণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন লাশটি সংরক্ষণের।বারডেম জেনারেল হাসপাতালে খোকন নন্দী মারা যাওয়ার পর থেকেই জটিলতার শুরু। তাঁর দুই স্ত্রী লাশ নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সৎকার কিংবা দাফন করতে চান। লাশ নিয়ে টানাটানি শুরু হলে তা রমনা থানা-পুলিশ ও আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

এরপর ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ খোকনের লাশ গ্রহণ করে। আদালত এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেননি, খোকন কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেকোনো এক স্ত্রীর কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হবে। বারডেম হাসপাতালে লাশ হিমঘরে রাখা বাবদ বিল হয়েছিল ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আদালতের আদেশে যে স্ত্রী স্বামীর লাশ পাবেন, তাঁকেই এ বিল পরিশোধ করতে হবে।

খোকন নন্দীর ভাই বাবুল নন্দী বলেন, তাঁর ভাইয়ের প্রথম স্ত্রী মিরা নন্দী। তাঁদের সঙ্গে মিরা ও তাঁর ছেলেমেয়েদের সব সময়ই যোগাযোগ আছে। খোকন তাঁর সম্পত্তি কাউকে লিখে দিয়ে যাননি। তাই সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা আছে। আপাতত সম্পত্তির হিসাব রাখছেন ভাইয়ের একমাত্র ছেলে। বাবুল দাবি করেন, ভাই মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে বিল পরিশোধ করেন বউদি মিরা। তারপর দ্বিতীয় স্ত্রী লাশ নিতে চাইলে এ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়।

মিরার আইনজীবী কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, সব নথিপত্রে খোকন নন্দী নামটিই রয়েছে। তবে খোকন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ ধরনের একটি কাগজ আদালতে জমা দিয়েছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা। কাগজটি জালও হতে পারে। হাইকোর্টে রিভিশন করা হয়েছে। রিভিশনের শুনানি হবে। তবে বলা যায়, খুব দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

হাবিবা আকতার (৬৫) অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক। জানালেন, খোকন ১৯৮০ সালের ২ এপ্রিল প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে বিয়ে করেন ১৯৮৪ সালের ১৫ জুলাই। মৃত্যুর আগে খোকন হাবিবার সঙ্গেই থাকতেন বলে দাবি করেন তিনি।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button