কানের দুলের লোভে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ বাসায় রাখে শেলী বেগম

*আট বছরের শিশু সায়মা জাহানের কানে একজোড়া সোনার দুল ছিল। শিশুটি খেলা করার সময় এটা দেখেন প্রতিবেশী শেলী বেগম। এরপর তিনি সায়মাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাঁর ঘরে নিয়ে যান এবং দুল জোড়া খুলে দিতে বলেন। কিন্তু সায়মা দিতে চাচ্ছিল না।*

*গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সায়মা নিজ বাড়ির আঙিনায় একাই খেলছিল। বেলা একটার পর থেকে তাকে না পেয়ে আশপাশের সব বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে বিকেলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। এরপর সায়মার পরিবারের লোকজন বিষয়টি শিবপুর থানায় জানালে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ ওই বাড়িতে আসে।*

*এ সময় আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় প্রতিবেশী মো. হানিফ (৪০) ও তাঁর স্ত্রী শেলী বেগমের (৩০) কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই বাড়ির মিটসেফের ভেতরে থাকা একটি বস্তা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।*

*সোনার কানের দুলের জন্য শেলী বেগম জোরাজুরি করতে থাকলে মা-বাবাকে বলে দেওয়ার কথা বলে শিশুটি। এরপরও দুল কেড়ে নিতে চাইলে কান্না করতে থাকে সায়মা। একপর্যায়ে তাকে গলা টিপে হত্যা করেন শেলী। পরে তার লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রান্নাঘরের মিটসেফে রেখে দেন। রাতের কোনো এক সময় বস্তাবন্দী লাশটি বাইরে কোথাও ফেলে আসার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আটক শেলী বেগম এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিবপুর থানা-পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।*

*নিহত সায়মা জাহান শিবপুরের যোশর ইউনিয়নের যোশর বাজার মুন্সিবাড়ি এলাকার সারোয়ার জাহানের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।পুলিশ জানিয়েছে, লাশ উদ্ধার হওয়ার পর হানিফ-শেলী দম্পতিকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। *

*নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শিশু সায়মার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শিশুটির লাশ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার আজই মামলা করতে আসবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ *

*নিহত সায়মার বাবা সারোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় শেলীকে ঘিরে ধরা হলে সে জানিয়েছিল, সায়মাকে হত্যার সময় তার সঙ্গে জেসমিন নামের আরেক প্রতিবেশী ছিল। অথচ পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সে জেসমিনের নাম বলছে না। একাই নাকি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সে জেসমিনের নাম পুলিশের কাছে বলছে না কেন, এটাই এক রহস্য। হত্যাকাণ্ডের সময় শেলীর স্বামী হানিফও ঘরে ছিল না বলে আমরা জানতে পেরেছি। রিমান্ডে নেওয়া হলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে।’এ সময় বিলাপ করে সারোয়ার জাহান বলেন, ‘মাত্র এক আনা তিন রতি ওজনের একজোড়া সোনার দুলের লোভে আমার মেয়েকে হত্যা করল তারা।’*

*শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটির কানে থাকা একজোড়া সোনার দুলের লোভে প্রতিবেশী শেলী বেগম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। নিহত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হওয়ার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।’*

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Exit mobile version