এক্সক্লুসিভকুড়িগ্রামবাংলাদেশশিক্ষাঙ্গন

*জন্ম থেকেই দুই হাত নেই,পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মানিক*

*জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। এতে দমে যায়নি মানিক রহমান। আর দশজনের মতোই পড়াশোনা করে যাচ্ছে সে। এবার দিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। পায়ে লিখে অন্যদের মতো স্বাভাবিক পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে সে। পরীক্ষাকেন্দ্রে কর্তৃপক্ষ তার বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মানিক ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।*

*শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক রহমানের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। বাবা মিজানুর রহমান একজন ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যবসায়ী। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সে বড় হয়ে ওঠে। দুটি হাত না থাকলেও পড়ালেখা বাদ দেয়নি। এ জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছোট থেকেই সে ভালো ফল করে আসছে। ২০১৬ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে গোল্ডেন এ‍ প্লাস এবং ২০২০ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।*

*এসএসসি পরীক্ষায় মানিকের আসন পড়েছে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৮ নম্বর কক্ষে। আজ বৃহস্পতিবার পরীক্ষার প্রথম দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষে প্রবেশের মুখে একটি টেবিলে বসে ডান পায়ের বুড়ো ও মধ্য আঙুলের মধ্যে কলম চেপে ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। আজ ছিল বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন তার লেখা। মাথা নিচু করে মনোযোগ দিয়ে লিখে যাচ্ছে। এদিক-ওদিকে তাকানোর ফুরসত নেই।*

*মানিকের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী, এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলেমেয়ের চেয়েও মানিক লেখাপড়ায় ভালো। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন, সে যেন সুস্থ–সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’*

*মানিকের মা মরিয়ম বেগম বলেন, মানিক শুধু যে দুই পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তা নয়; দুটি হাত না থাকলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলেমেয়ের মতোই পা দিয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে। বাড়িতে পা দিয়েই কম্পিউটার টাইপ, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী মানিক।*

*বড় হয়ে কম্পিউটার প্রকৌশলী হওয়ার লক্ষ্য মানিক রহমানের। সে বলেন, ‘আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন এসএসসি পরীক্ষায় যেন ভালো ফল করতে পারি। বড় হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মা–বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’*

*ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানিক অসাধারণ। সে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের ফাঁকে কলম ধরে লেখে আর বাঁ পা দিয়ে প্রশ্ন ও খাতার পাতা ওলটাতে পারে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে সে ভালো ফল করে আসছে। পড়ালেখার পাশাপাশি আবৃত্তি ও গানেও সমান পারদর্শী। সে যেন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় (পাইলট) কেন্দ্রের সচিব মশিউর রহমান বলেন, পা দিয়ে লিখে কীভাবে এত সুন্দর লেখা হয়, এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার।*

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button