Bangla News

৯ বছরের মধ্যে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

জুমবাংলা ডেস্ক : লাগামহীন তাপমাত্রার পারদ যেন নামছেই না। ক্রমশই বাড়ছে। সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। ২০১৪ সালের ২১ মের পর এটি রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ঊর্ধ্বমুখী এই তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত রাজশাহীর জনজীবন। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এই তাপপ্রবাহ। একান্ত জরুরি ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। পিচঢালা সড়কে দুপুর বেলা যেন আগুন ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে চরম দুর্ভোগে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের বোরো আবাদ। ঝরে পড়ছে আমের গুটি। আমের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী এই প্রবণতার মাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে তার কোনও ইঙ্গিত দিতে পারছেন না আবহাওয়াবিদরা। তবে মঙ্গলবারের (১৮ এপ্রিল) পর বৃষ্টির আভাস দিয়েছেন। আর বৃষ্টি হলেই কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।

২০১৪ সালের ২১ মে রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬, ২০০৫ সালের ২ জুন ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, রবিবার (১৬ এপ্রিল) রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ৩৯ দশমিক ৫, শুক্রবার ৪০ দশমিক ৬, বৃহস্পতিবার ৪০ দশমিক ৫ বুধবার ৩৯ দশমিক ১ ও মঙ্গলবার ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।

সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে ধরা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। রাজশাহীতে এখন তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আর অব্যাহত এই তাপমাত্রায় আম ও বোরো ফসলের ক্ষতি এড়াতে বাড়তি পরিচর্যা নিতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবারের পর বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী পারদ এবার কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে তা বলা যাচ্ছে না।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান জানান, তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়ছেই। যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে সামনে তাপমাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল। তবে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে আসবে।

তিনি আরও জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। প্রতিদিন তাপমাত্রা কিছুটা হলেও বেড়েছে। প্রতিদিন দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনও কোনও দিন তার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা থেকে মেসেজ দেওয়া হয়েছে রাজশাহীতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। কারণ রাজশাহীতে বৃষ্টিপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই। এমনকি তাপমাত্রা কমবে এমনটাও কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

একদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অন্যদিকে প্রখর রোদ, দুই মিলে মানুষসহ প্রাণীকুলের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। প্রখর রোদের কারণে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। কারণ বাইরে বের হলে চোখে মুখে লাগছে আগুনের ঝালা। তবে ঘরে বাইরে কোথাও মিলছে না স্বস্তি। ঘরের তাপমাত্রা যেমন, বাইরেও তেমনি গরম অনুভূত হচ্ছে।

বিশেষ করে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। প্রখর রোদের কারণে লোকজন বেলা ১১টার মধ্যে বাইরে কাজ কাম সেরে বাসায় চলে যাচ্ছেন। আর শ্রমিক শ্রেণির মানুষ কাজে গিয়েও সর্বোচ্চ সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরছেন। দুপুরের পর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নগরীর রাস্তাঘাট থাকছে অনেকটাই ফাঁকা।

অটোরিকশাচালক মফিজুল ইসলাম বলেন, সামনে ঈদ। এর মধ্যে পড়েছে প্রচুর গরম। বাড়ির বাজার হয়নি এখনও। ছেলে মেয়েদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হলে লোকজন পাই না। কারণ একে তো রমজান মাস, তার ওপর প্রচণ্ড গরম ও প্রখর রোদ। দুই মিলে সকালের দিকে সরকারি কর্মচারী ছাড়া সাধারণ মানুষ বাইরে বের হয় না। দুপুর ২টা পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ৫০০ টাকা ভাড়া জোটে না।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক এসএম তিতুমীর জানান, আজকে প্রচুর গরমে তার অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। ঘরের বাইরে বিশেষ করে পিচঢালা সড়কের ঝলসানো তাপ সহ্য করার মতো না। দুপুরটা আমার খুবই কষ্টে কেটেছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, উত্তপ্ত গরমের একটা প্রভাব কৃষিতে পড়ছেই। চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে বোরো ও আম-লিচু চাষিদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত তেমন কোনও ক্ষয়-ক্ষতির খবর তারা পাননি।

তানোর পৌর সদর গুবিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কাজলী বেগম বলেন, বয়স অনেক হয়েছে। তাপমাত্রাও দেখেছি। রোজাও থেকেছি। কিন্তু এবারের তাপ ভিন্ন। গলা-বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ঘরে ফ্যান দিয়েও তাপ যাচ্ছে না।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button