এক্সক্লুসিভবিশ্ব সংবাদমধ্যপ্রাচ্য

ইরানে পুলিশের হেফাজতে যুবতীর মৃত্যুতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ

‘অনুচিত হিজাব’ পরার কারণে ১৩ই সেপ্টেম্বর মাহশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে ইরানের নীতি পুলিশ। কারণ ওই হিজাব দিয়ে তার চুল পুরোপুরি ঢাকা ছিল না। এর পর পরই কোমায় চলে যান তিনি। শুক্রবার মারা যান আমিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মাহসার জন্মশহর সাকেজে তার জানাজা ও দাফন হয়। আশপাশের এলাকার অনেক মানুষ মাহসার জানাজায় অংশ নেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, উপস্থিত লোকজন বিক্ষোভ করছেন।

তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। সাকেজে কিছুসংখ্যক বিক্ষোভকারী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি ইঙ্গিত করে স্লোগান দেন। তারা স্লোগানে বলেন, “স্বৈরশাসক নিপাত যাক”। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

এই বিক্ষোভ শনিবার ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের রাজধানী সানান্দাজে পৌঁছে গেছে। তেহরানের নীতি পুলিশকে (মোরালিটি পুলিশ) মাহশা আমিনির মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এর নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে দেশটিতে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ‘একনায়কের মৃত্যু হোক’ ‘খামিনির মৃত্যু হোক’ লেখা ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে তারা নিহত কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির একটি ব্যানার ছিড়ে ফেলে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন অ্যারাবিয়া।

ইরানে জনপরিসরে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। এই বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে কি-না, তা তদারকি করে দেশটির নৈতিকতা–বিষয়ক পুলিশ। এই বিধির আওতায় নৈতিকতা-বিষয়ক পুলিশ দল গত মঙ্গলবার মাহসাকে তেহরান থেকে আটক করে। আমিনি তার পরিবারের সঙ্গে তেহরান সফরে গিয়েছিলেন।আটকের পর তিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন প্রতিবাদ হচ্ছে, তেমনি রাজপথেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। তেহরান পুলিশ বলেছে, আটক অবস্থায় আকস্মিকভাবে হার্টের সমস্যা দেখা দেয় আমিনির। পুলিশ তাকে প্রহার করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। তবে আমিনির পরিবারের দাবি, তাদের মেয়ের কোনোদিন হার্টের কোনো সমস্যা ছিল না। গ্রেপ্তারের পূর্বে তিনি সুস্থ ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, পুলিশ ভ্যানে তোলার পর আমিনিকে মারধর করা হয়। তবে ইরানি পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।নারীদের পোশাক নিয়ে ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসির কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মাথায়ই এ ঘটনা ঘটলো। উল্লেখ্য, ইসলামি বিপ্লবের পর ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরতে হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া কিছু নারীকে দেখা যায় মাথার স্কার্ফ ফেলে দিয়েছেন। সাকেজের বিক্ষোভে এমন দৃশ্য দেখা যায়। সাকেজ থেকে ধারণ করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় প্রায় অচেতন একজন মানুষ। তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, তাকে মাথায় গুলি করা হয়েছে। আল অ্যারাবিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ওই ভিডিওর যথার্থতা যাচাই করতে পারেনি।

ইরানি সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মসিহ আলি নেজাদ টুইটার পোস্টে বলেন, “এই হলো সত্যিকারের ইরান। মাহসাকে দাফনের পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ইরানের সাকেজ শহরের নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়েছে। বেশ কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। হিজাব পুলিশ প্রথমে ২২ বছর বয়সী এক নারীকে (মাহসা) হত্যা করেছে। আর এখন তারা শোকাহত মানুষের বিরুদ্ধে বন্দুক ব্যবহার করছে। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে।”

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button