অপরাধআইন-আদালত

জামিনের আদেশটি যৌক্তিকতা এবং আইন সঙ্গত কি না যাচাই করার কারণ রয়েছে

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এই জামিন আদেশের যথার্থতা, যৌক্তিকতা এবং তা আইন সঙ্গত কি না যাচাই করার সঙ্গত কারণ রয়েছে।

গতকাল রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের জামিন বাতিলে স্ব-প্রণোদিত রুল দিয়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে মারধরের মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, জামিনের আদেশটি স্পষ্টতই অবিচারক সুলভ। সোমবার সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভুঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এই মামলায় ৩০৭ ধারার অভিযোগ ও প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে এবং আসামিরা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করার মতো অপরাধ করেছে মর্মে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল।

পুলিশ ফরোয়ার্ডিংয়ের বিবরণ মোতাবেক ওই আসামিদের এই পর্যায়ে জামিন দেওয়ার যৌক্তিকতা ছিল না। এমন জামিন প্রদানে শক্তিশালী আসামিদের দ্বারা দুর্বল ভিকটিমকে ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করা, মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ ও তদন্তকে প্রভাবিত করার বাস্তব কারণ ছিল। জামিনের আদেশটি স্পষ্টতই অবিচারক সুলভ। এই জামিন আদেশের যথার্থতা, যৌক্তিকতা এবং তা আইন সঙ্গত কি না যাচাই করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। আদালত আসামি মো. কাইয়ুম ও ফারুকের জামিন আদেশ রহিত, বাতিল করে আত্মসমর্পণ করার এবং জেল হাজতে প্রেরণের কেন আদেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৩৩৯ (১) ধারার বিধান মতে হাইকোর্ট এ রুল জারি করেন।

আদেশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ময়মনসিংহের দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ এবং ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশের অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে। গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দেওয়ার আশ্বাসে বাড়ির জায়গা লিখে নেওয়া ও তাকে মারধরের ঘটনায় ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বৃদ্ধার ভাতিজী শাহানা আক্তার বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দেওয়ার আশ্বাসে বাড়ির জায়গা লিখে নেওয়া ও তাকে মারধরের ঘটনায় ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওইদিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্যের ছেলে আল আমিন ওরফে কাইয়ুম ও নাতী মো. ফারুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ২০ জুলাই ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের জামিন দিয়ে দেন। জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের প্রয়াত কিতাব আলীর স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৬০) তার দশ শতক জমিতে একাই বসবাস করছিলেন। বৃদ্ধার বাড়ির পাশেই সোহাগী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়ার বাড়ি।

প্রতারণা করে অন্তত দুই বছর আগে বৃদ্ধার পুরো জমিই লিখে নেন সুরুজ। বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। বৃদ্ধাকে জমির কাগজপত্র, জাতীয়পরিচয় পত্র ও ছবি দেওয়ার কথা বলেন। তখন সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় বৃদ্ধা সুরুজকে সব কিছু দেন। এরপর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে খাইরুন্নেছার বাড়ির দশ শতাংশ জায়গা লিখে নেন সুরুজ। পরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দলিলে জমির মূল্য লেখা হয় ৪ লাখ টাকা। প্রতারণার বিষয়টি খাইরুন্নেছা ও তার স্বজনরা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করে এবং জায়গা দখল নিতে বাধা দেয়। ১৫ জুলাই সকালে সুরুজ মিয়া তার দলবল নিয়ে বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গায় গাছ লাগাতে আসে। বৃদ্ধা বলেন, আমি আমার জায়গা ছাড়িনি। আমার থাকার একমাত্র সম্বল এই বাড়ি। এখানেই আমার মরণ হবে।

আর এই জায়গাটা নিয়ে সুরুজ মেম্বার প্রতারণা করেছে এবং আমাকে ও আমার ভাতিজিদের মারধর করেছে। আমি এর বিচার চাই।এসময় বৃদ্ধা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা গাছ লাগাতে বাধা দিলে তাদের লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে সুরুজ বৃদ্ধা খাইরুন্নেছাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার মাথার চুলের মুঠোয় ধরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে তার ভাইয়ের পাঁচ মেয়েকে মারধর করে ইউপি সদস্যের লোকজন। 

বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button