এশিয়াকরোনা ভাইরাস

চীনে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার পর বিদেশিদের সংস্পর্শে না আসার সতর্কতা

চীনে ধরা পড়েছে মাঙ্কিপক্স। আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে চংকিং শহরে। ঐ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি বিদেশ থেকে এসেছেন বলে জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ।চীনে প্রথম বারের মতো মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার পর বিদেশিদের সংস্পর্শে আসার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন চীনের শীর্ষ এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

উইবোতে করা এক পোস্টের মাধ্যমে জানা গেছে, চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর প্রধান মহামারি বিশেষজ্ঞ উ জুনিউ ‘বিদেশিদের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন’।তার এই পোস্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে বর্ণবাদী আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। যদিও মূল পোস্টে করা মন্তব্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি থেকে।

মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ প্রতিরোধে স্থানীয় সময় শনিবার ওই চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেখেন যে, ‘আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসাবে, এটি সুপারিশ করা হচ্ছে যে `বিদেশিদের সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শে আপনার না আসা’।

চংকিং এর দক্ষিণ-পশ্চিম পৌরসভা এলাকায় প্রথম মামলাটি সনাক্ত করা হয়। সেই ব্যক্তি Covid-19 কোয়ারেন্টাইনের অধীনে ছিল, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে- ওই ব্যক্তিটি বিদেশী নাকি চীনা নাগরিক তা জানা যায়নি। ওই শহরের পুর কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিভৃতবাসে রেখেছে। তাঁকে মেডিক্যাল পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আক্রান্তের সংস্পর্শে যাতে কেউ না আসে সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়াও স্থানীয়দের তিনি গত তিন সপ্তাহে বিদেশ থেকে ফিরে আসা ভ্রমণকারীদের ও অপরিচিতদের সংস্পর্শে আসা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।এদিকে, চীনা ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পোস্টটি দ্রুত শেয়ার হওয়া শুরু হয় এবং অনেকে সমালোচনা করছেন।

মাঙ্কিপক্সের কেস, যা ফ্লু-এর মতো উপসর্গ এবং ফোস্কা-সদৃশ ক্ষত সৃষ্টি করে, মে মাসে বিশ্বজুড়ে উদ্ভূত হতে শুরু করে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বছর এ পর্যন্ত ২৩,৫০০টি কেস রিপোর্ট করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ উ তার পোস্টে লিখেছেন, মাঙ্কিপক্সের নিরীক্ষণ এবং প্রতিরোধ জোরদার করা প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকির উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। তিনি জনসাধারণের জন্য পাঁচটি সুপারিশ দিয়েছেন – প্রথমটি হচ্ছে, “বিদেশীদের স্পর্শ করবেন না।” পাশাপাশি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া আটকাতে কড়া নজরদারির পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি।

সুপারিশটি ওয়েইবোতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, কেউ কেউ তার পরামর্শকে যুক্তিসঙ্গত বলে প্রশংসা করেছে  ।তবে অন্যরা এই পোস্টটিকে বৈষম্যমূলক এবং ক্ষতিকারক বলে নিন্দা করেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া দ্বারা শেয়ার করা উ এর পোস্ট এবং অন্যান্য সতর্কতা নিয়ে বিতর্ক  চীনে কঠোর কোভিড নীতির কথা মনে করিয়ে দেয় , যেখানে প্রায় তিন বছরের কঠোর বিধিনিষেধ দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করেছে এবং অর্থনীতিকে সমস্যায় ফেলেছে। কঠোর কোভিড নীতির মধ্যে রয়েছে  সীমান্ত বিধিনিষেধ, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা এবং স্ন্যাপ লকডাউন।

১৯৫৮ সালে বিজ্ঞানীরা এই রোগটি প্রথম শনাক্ত করেন। তারা তখন গবেষণায় বানরদের মধ্যে ‘পক্স-সদৃশ’ রোগের অস্তিত্ব টের পান এবং পরে এটি মাঙ্কিপক্স নামকরণ হয়। মানব শরীরে এর সংক্রমণ ঘটে ১৯৭০ সালে। কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি নয় বছর বয়সী ছেলের মধ্যে ঘটে এ সংক্রমণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, প্রতি বছর আফ্রিকার প্রায় ডজনখানেক দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর আসে। বেশিরভাগই কঙ্গোতে, যেখানে বছরে প্রায় ছয় হাজার মানুষ শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়া যায় এবং নাইজেরিয়ায় এ সংখ্যা কমপক্ষে তিন হাজার।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যে কোন ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায় বলে মনে করেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।তবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button