অপরাধআইন-আদালতবাংলাদেশ

ছুরিকাঘাতে গরিবের ডাক্তার খ্যাত বুলবুল আহমেদ হত্যা মামলার চার্জশিট প্রস্তুত

ঢাকার কাজীপাড়ায় ছুরিকাঘাতে গরিবের ডাক্তার খ্যাত বুলবুল আহমেদ হত্যা মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন চার্জশিট আদালতে জমা দিবেন তদন্ত কর্মকর্তা।চার্জশিটে পেশাদার ৫ ডাকাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে।

মামলার তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বুলবুল হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করা হয়েছিল।কারণ তার পকেটে নগদ টাকা রেখে কেন শুধুমাত্র ১টা মোবাইল ফোন নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা? তদন্তে এই প্রশ্নের উত্তর বের হয়েছে। কারণ মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার সময় ডাকাতরা বুলবুলের উরুতে ছুরিকাঘাত করে। এতে করে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ ছাড়া ওই সময় একটি বাস চলে আসায় তারা মোবাইলফোন ছাড়া আর কিছু নিতে পারেনি।

তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই আমরা তদন্ত করেছি। চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আদালতে জমা দেয়া হবে। মামলার বাদী নিহত বুলবুল আহমেদের স্ত্রী শাম্মী আক্তার বলেন, ডিবির তদন্তে আমরা সন্তুষ্ট। তারা তদন্তের সময় সার্বক্ষণিক আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আসামিরা যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পায় সেটাই আমার চাওয়া।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দন্ত চিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার বুলবুল আহমেদ ঠিকাদারি কাজের জন্য চলতি বছরের ২৭শে মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের সময় নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। তিনি শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য রিকশাযোগে রওনা হন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ৬১৭, পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার ও গ্রামসিকো ফার্নিচার শো-রুমের সামনে মেইন রাস্তার ওপর  পৌঁছান।  এ সময় গ্রেপ্তারকৃত রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করে বুলবুলের কাছে যা যা আছে দিতে বলে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখায়। বুলবুল তার সঙ্গে থাকা মোবাইলফোন দিতে চাননি। তিনি মোবাইলফোন রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। রিপন ফোন ছিনিয়ে নেয়ার জন্য বুলবুলের উরুতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। বুলবুলের উরুতে জখম হয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। ঘটনার সময় একটি বাস চলে আসায় রিপন বুলবুলের কাছে থাকা মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। বুলবুল রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ওপর পড়ে যান। পরে ওই রাস্তা দিয়ে বিহঙ্গ বাসের চালক আশিক ও হেলপার সাগর বুলবুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে চিকিৎসকরা ঘটনাটি কাফরুল থানা পুলিশকে জানান। পুলিশ হাসপাতালে এসে বিষয়টি বুলবুলের স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনকে জানায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বুলবুলকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা বুলবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরে বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জবানবন্দিতে আসামিরা বলেছে তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। চলতি বছরের ২৬শে মার্চ রাত ১১টার দিকে তারা কাঁঠালতলা ভাঙা বাড়িতে মিলিত হয়। রাত ২টা পর্যন্ত পরামর্শ করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হয়। বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে তারা কোনো ডাকাতি করতে পারেনি। ভোরবেলা তারা পশ্চিম কাজীপাড়ায় আসে। তখন রিকশাযোগে বুলবুলকে যেতে দেখে গতিরোধ করে তার কাছে যা যা আছে দিতে বলে। না দিলে ছুরিকাঘাত করার ভয়ভীতি দেখায়। কিন্তু ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বুলবুল নিজের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি দিতে চাননি। এ সময় রিপন তাকে ছুরিকাঘাত করে তার মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে তারা সবাই কাঁঠালতলার মোড়ে একত্র হয়। রিপন ফোন করে রায়হানকে ডেকে আনে। রিপন বুলবুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইলফোন রায়হানের কাছে দেয়। এজন্য রায়হান রিপনকে ১৫০০ টাকা দেয়। এই টাকা বাকিরা ভাগাভাগি করে নেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ৩০শে মার্চ বুলবুল হত্যার সঙ্গে জড়িত মো. হাফিজুর রহমানকে মিরপুর ১১ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যমতে ওই রাতেই মনিপুর কাঁঠালতলা কাঠের ফার্নিচার গলি থেকে মো. রায়হান ওরফে আপন ওরফে সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার ও রায়হানের কাছ থেকে বুলবুলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পরে রায়হানের তথ্যমতে রাসেল হোসেন হাওলাদার ও সোলায়মান মীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। চারজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে আদালত প্রত্যেকের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর ৩রা এপ্রিল হাফিজুর রহমান ও সোলাইমান মীর এবং রাসেল ও রায়হান ৫ই এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের দেয়া তথ্যমতেই আরেক আসামি রিপনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা হলো- মো. রায়হান ওরফে আপন ওরফে সোহেল (২৭), মো. রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), মো. হাফিজুর রহমান ওরফে আরিয়ান হোসেন হৃদয় (২৫),  সোলাইমান মীর (২৩) ও রিপন (৩০)।তারা প্রত্যেকেই সংঘবদ্ধ ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। চক্রটির মূলহোতা গ্রেপ্তারকৃত রায়হান। ডাকাতি করে যেসব মালামাল পাওয়া যায় চক্রের সদস্যরা তার কাছে জমা দেয়। সে ডাকাতির সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান করে নজরদারি করে এবং পুলিশ বা অন্য কেউ আসছে কিনা সেটি দেখে। বুলবুল হত্যাকাণ্ডের দিনও রায়হান ঘটনাস্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে নজরদারি করেছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button