বগুড়ারাজনীতি

স্বতন্ত্র এমপি বাবলুর ওপর যুবলীগের পিস্তল নিয়ে হামলা,বগুড়ায় তোলপাড়

আজ বুধবার সকালে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় অংশ নিতে যাওয়ার সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রেজাউল করিম বাবলুর ওপর যুবলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা পরিষদের হলরুমে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা চলাকালে বাইরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে এমপির ওপর হামলার পরও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা যথারীতি চলে।এসময় এমপি বাবলু তার লাইসেন্সকৃত পিস্তুল উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেন। এ নিয়ে গোটা বগুড়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বুধবার উপজেলা পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা ছিল। সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সংলগ্ন হলরুমে সভা শুরু হয়। সভা শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর বাইরে হট্টগোল শুরু হলে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুসহ অনেকে বের হয়ে দেখেন এমপি বাবলু এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি চলছে।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান  হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সংসদ সদস্য তার ব্যক্তিগত পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের ২য় তলায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে এমপি এবং তার পিএসকে উদ্ধার করে। পিএসকে হাসপাতালে ভর্তির পর সাংসদকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এই ব্যাপারে এমপি বাবলু জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি দীর্ঘদিন কোনো সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। বুধবার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত  কমিটির সভায় অংশ নিতে তিনি উপজেলা পরিষদে যান। তবে তিনি পৌঁছানোর আগেই সভা শুরু হয়ে যায়। তখন তিনি ইউএনও আসিফ আহমেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কার্যালয়ের দরজার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় ব্যক্তিগত সহকারী রেজা এবং গাড়ি চালকসহ কয়েকজন তার সঙ্গে ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীরসহ যুবলীগের ৪/৫জন নেতা হঠাৎ করে ইউএনওর দরজার সামনে এসে তার ওপর হামলা করে।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বুঝতে পেরে সঙ্গে থাকা লোকজন যখন আমাকে রক্ষার চেষ্টা চালায় তখন যুবলীগ নেতা বাদশা আলমগীর রড দিয়ে আমার পিএসের মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আহত সেলিম রেজাকে হাসপাতালে পাঠায়। আমি একজন সংসদ সদস্য। উপজেলা পরিষদে আমার ওপর হামলা চালানো হলো, কিন্তু তারপরও ইউএনও সাহেব আমাকে দেখতে আসলেন না, আমার খোঁজও নিলেন না।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, ‘আমার সঙ্গে এমপির কিছু হয়নি। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এমপির পিএসের ঝামেলা ছিল সেটা নিয়ে একটা হট্টগোল হয়েছে।’

তবে শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর এমপি বাবলু কিংবা তার পিএসের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এমপি বাবলু তার পিএস মো. রেজার মাধ্যমে ৪ বছর আগে আমার কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকে বাবলু এলাকায় আসেননি এবং প্রকল্পও দেননি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, ‘আমার সঙ্গে এমপির কিছু হয়নি। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এমপির পিএসের ঝামেলা ছিল সেটা নিয়ে একটা হট্টগোল হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ৪ বছর পর হঠাৎ করে এমপি এবং তার পিএসকে বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদে দেখার পর আমি আমার প্রকল্প না দেওয়ার কারণ জানতে চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু সেখানে এলে এমপি তার কোমরে থাকা রিভলবার বের করে গুলি করার হুমকি দেন। এ সময় সঙ্গে থাকা যুবলীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে তিনি পিস্তল লুকিয়ে ফেলেন। এরপর তিনি রড দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করেন।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button