বিএনপিমুন্সিগঞ্জরাজনীতি

মুন্সিগঞ্জের ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষে আহত ৮০

আজ বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।উপজেলার মুক্তারপুরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় হওয়া এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন। বিকেল চারটার দিকে পুলিশের আরও কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএনপি কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন দুজন সংবাদকর্মী।

ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে এতে ১০ জন পুলিশ সদস্য ও ৩ সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ৮টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। ৮ জনকে নেয়া হয়েছে পুলিশি হেফাজতে। আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম, সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান, ইন্সপেক্টর অপারেশন মোজাম্মেল হক, এসআই কাজল দাসসহ আরও অনেকে। আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের এক কর্মকর্তা তাঁদের কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্মুহু ছোড়া কাঁদানে গ্যাস, গুলি ও রাবার বুলেটে তাঁদের ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে পুলিশের ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

মূলত, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম শহরের মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে পৌর বিএনপি। দুপুর আড়াইটা থেকে মুক্তারপুর এলাকার আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। পুলিশও অবস্থান নেয় আগে থেকেই। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসতে শুরু করে।

এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ফলে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঘটনাস্থলটি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

ক্ষোভ জানিয়ে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। এ সময় দু’দিক থেকে পৃথক দু’টি মিছিল আসছিল। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় ও লাঠিচার্জ করে। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস গুলি ছোঁড়ে। এতে বিএনপির ৭০-৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। জানান, তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, পুলিশ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। তাঁদের নিষেধ করায় তাঁরা আরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, কোনো রকমের সভা সমাবেশের অনুমতি ছিল না তাদের। অনুমতি ছাড়া তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানচলাচলের বাধা দিচ্ছিল। পরে এক পর্যায়ে দুই গ্রুপ (রতন-আব্দুল হাই) নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে। এ কারণেই পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য যায়। এ সময় তারা পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা করে। পুলিশ তখন আত্মরক্ষার্থে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমাদের পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।যারা অনুমতি ছাড়া এ সমাবেশ করেছে, বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button