আওয়ামী লীগবাংলাদেশবিএনপিমুন্সিগঞ্জরাজনীতি

মুন্সিগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর যুবদল নেতার কারখানায় আগুন

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর সাবেক এক যুবদল নেতার সুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুদ্দিনের সুতার কারখানায় এ আগুন লাগে। নিজামুদ্দিন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল হাইয়ের ভাগনে। অগ্নিকাণ্ডে কারখানার পাশে আরও পাঁচটি ঘর ভস্মীভূত হয়েছে।

পঞ্চসার ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। এর মধ্যে রাত দেড়টার দিকে পোড়া গন্ধে স্থানীয় লোকজনের ঘুম ভাঙে। তখন বিএনপি নেতা নিজামের সুতা তৈরির কারখানাটি জ্বলছিল। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ঘরে। স্থানীয় লোকজন পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ভোররাতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অগ্নিকাণ্ডের জন্য মো. নিজামুদ্দিন পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা এবং তাঁর কর্মীদের দায়ী করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গতকাল সংঘর্ষের জেরে রাতে তিন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে তাঁর কারখানায় ঢুকেছিলেন। সেখান থেকে কিছু সরঞ্জাম লুট করার পর তাঁরা বেরোনোর আগে আগুন ধরিয়ে দেন।তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, আগুন দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুলিশের পরামর্শে তাঁরা ‘সব ধরনের ঝামেলা’ থেকে দূরে থাকছেন।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মো. নিজামুদ্দিন আজ সকালে বলেন, ‘গতকালের সংঘর্ষের জেরে রাতে পঞ্চসার ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার লোকজন আমার ফ্যাক্টরিতে ঢোকে। তাঁদের সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা তিনজন ছিলেন। তাঁরা ফ্যাক্টরির সুতা তৈরির কাঁচামাল কেনার ২০ লাখ টাকা লুটপাট করে নেন। সেই সঙ্গে ফ্যাক্টরির দামি মোটর ও মালামাল নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ফ্যাক্টরিতে তাঁরা আগুন দিয়ে অন্ততপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন।’ তিনি আরও বলেন, মুক্তারপুর এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তাঁদের ভয়ে সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে পঞ্চসার ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পুলিশের ওপর গতকালের হামলায় আমরা চিন্তিত। আগুন দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। আজকে জেলা পার্টি অফিসে আমাদের একটি সভা আছে। সেখানে আমাদের পরবর্তী করণীয় আলোচনা করা হবে।’আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নেতার কারখানায় আগুন দেওয়ার সময় কোনো পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন না। কারা আগুন দিয়েছে বিষয়টিও জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে তদন্ত করা হবে। ঘটনার সঙ্গে যাঁরাই জড়িত থাকুন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে কারখানার পাশাপাশি যে পাঁচটি ঘর পুড়েছে সেগুলোর একটিতে থাকতেন রমজান মিয়া। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলো। আমরা আমাদের বাড়িতে ছিলাম। বিএনপি নেতার ফ্যাক্টরিতে আগুন দিল। সে আগুনে আমাদেরও বাড়িঘর ছাই হলো। আমাদের এখন খাওয়ার মতো কিছু অবশিষ্ট নেই। যারা আগুন দিল, আমরা তাদের বিচার চাই।’ পার্শ্ববর্তী ঘরের বাসিন্দা রেসিয়া বেগম বলেন, ‘রাতে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখি। বাচ্চাদের নিয়ে ঘর থেকে বের হই। আগুনে ঘরের সব ছাই হয়ে গেছে। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বেলা তিনটার দিকে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মুক্তারপুর মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। পুলিশ তাঁদের সেখানে জড়ো হতে নিষেধ করলে তাঁরা মুক্তারপুর থেকে ট্রাকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। তখন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত।গতকাল বেলা তিনটার দিকে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তিন নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের অদূরে মুক্তারপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button