এক্সক্লুসিভজাতীয়ঢাকাবাংলাদেশবিএনপিমুন্সিগঞ্জরাজনীতি

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত যুবদলের কর্মী শাওন মারা গেছেন

মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মোহাম্মদ শাওন মারা গেছেন। তিনি যুবদলের কর্মী ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে মৃত্যু হয় তার। বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, আগামীকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে মোহাম্মদ শাওনের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে, কখন এ জানাজা হবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শাওন ভূঁইয়া (২২) সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার তোয়াব আলীর ছেলে। শাওন পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন শাওন। তিনি মুক্তারপুর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী ছিলেন।জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের অদূরে মুক্তারপুরে গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে শাওন ভূঁইয়া ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় যুবদলের শাওনকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর নামের যুবদলের আরেকজনকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ছাত্রদলের অপর একজনের অবস্থা মোটামুটি ভালো।ডা. রফিকুল ইসলাম গতকাল জানিয়েছিলেন, শাওনের মাথার আঘাত গুরুতর ছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ ছাড়া টিয়ারশেলের জন্য জাহাঙ্গীরের নাক-মুখ পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারায় তাকে কৃত্রিম উপায়ে বিকল্পপথে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বেলা তিনটার দিকে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মুক্তারপুর মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। পুলিশ তাঁদের সেখানে জড়ো হতে নিষেধ করলে তাঁরা মুক্তারপুর থেকে ট্রাকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। তখন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন আহত হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী ৫০ থেকে ৬০ জন, ৩ জন সংবাদকর্মী এবং ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

শাওনের ছোট ভাই সোহান ভূঁইয়া আজ রাত নয়টার দিকে বলেন, শাওন বাবার সঙ্গে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বুধবার বিএনপির সমাবেশে এসেছিলেন। পরে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে মাথায় গুলি করে। এতে তাঁর ভাই তখনই জ্ঞান হারান। তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের লোকজন তাঁর ভাইকে চিকিৎসা করাতে দেননি। তাঁরা শাওনকে ঢাকায় নিয়ে আসতে চাইলেও সেখানেও তাঁদের আটকে দেন। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাওনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এরপর থেকে তাঁর ভাই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি।সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তারিকুজ্জামান। যুবদল কর্মীর মৃত্যুর বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো তিনি জানেন না।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button