অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশসিলেট

সিলেটের পরিবহন শ্রমিক নেতা পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে জিম্মি করলেন নগরবাসীকে

দাপট দেখালেন সিলেটের পরিবহন শ্রমিক নেতারা। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন পুলিশকে। জিম্মি করলেন নগরবাসীকে। গোটা সিলেটকে রাখলেন তিন ঘণ্টা অচল। রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি। চাকা বন্ধ। নড়ছে না। মোড়ে মোড়ে শ্রমিকদের অবস্থান। কারও বলার কিছুই নেই। জিম্মি সবাই।

পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ সিলেটে যোগদানের পর থেকেই পরিবহন সেক্টরে নজর তার বেশি।শৃঙ্খলিত নয় সিলেটের পরিবহন ব্যবস্থা। নগরে যানজটও বেশি। সিটি করপোরেশনের নানা পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। পুলিশ কমিশনার প্রথমেই নজর দিয়েছিলেন সিএনজি অটোরিকশার দিকে।

প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশাকে মিটার ও গ্রিল স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এতে এলো পাল্টা হুঙ্কার। পিছু হটলো পুলিশ। এরপর গাড়ি ফিটনেসসহ নানা বিষয় নিয়ে কঠোর হলো পুলিশ। বিশেষ করে টোকেন বাণিজ্য বন্ধের দিকেও দেয়া হলো নজর। এতে আরও ক্ষুব্ধ হলেন পরিবহন শ্রমিকরা।

প্রায় দু’মাস আগে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সড়কে নামানো হয় ভ্রাম্যমাণ টিম। জরিমানা আদায় করা হয়। এতে আরও ক্ষুব্ধ হন পরিবহন শ্রমিকরা। আগস্টের মাঝামাঝি সময় সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের ৫টি সংগঠন একসঙ্গে যৌথসভা করে।

এ সময় গঠন করা হয় সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। আর ওই পরিষদ থেকে দেয়া হয় কর্মসূচি। এতে পুলিশ কমিশনার, ডিসি ট্রাফিকের প্রত্যাহারসহ ৬টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। মূলত শ্রমিকদের দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে; রাস্তায় পুলিশের হয়রানি ও জরিমানা বন্ধ করা। এই দাবিতে সর্বশেষ গত ১৩ই সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট পালন করা হয়। ধর্মঘটের কারণে গোটা দিন সিলেটে গাড়ি চলেনি। সামনে এসএসসি পরীক্ষা।

সিলেটে রাস্তায় এম্বুলেন্সও দাঁড়িয়ে। দূরপাল্লার যানবাহন আটকা। বড় গাড়ি তো দূরের কথা মোটরসাইকেল চলাচলও ছিল বন্ধ। যাত্রীদের ত্রাহি অবস্থা। এমন পরিস্থিতি অতীতে কখনো হয়নি। নাছোড়বান্দা পরিবহন শ্রমিক নেতারা। দক্ষিণ সুরমা থেকে দিলেন হুঙ্কার। মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তবেই ঘুরবে গাড়ির চাকা।

অবশেষে রাত ১০টায় দক্ষিণ সুরমায় হলো বৈঠক। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা  উপস্থিত। আশ্বাস দেয়া হলো মামলা প্রত্যাহারের। এরপর শ্রমিকরা সরে গেলেন রাস্তা থেকে। এনিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই সিলেটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবহন শ্রমিকদের হঠাৎ কর্মকাণ্ডের সমালোচনা চলেছে রাতভর। কয়েক মাস ধরেই সিলেট নগর পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছেন।

নানা বিষয়কে মাথায় রেখে সিলেটের পুলিশের সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আহ্বানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আর ওই বৈঠকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলে ওইদিন রাতেই পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন।

এ কারণে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে ব্যারিকেড তুলে নেয়। তিনি বলেন- ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই আমরা আইনি লড়াইয়ে নামতাম। পুলিশ এক বহিষ্কৃত শ্রমিক নেতাকে ধরে এনে মামলা দিয়েছে। এটি সিলেটের সামাজিকতার সঙ্গে মানানসই নয়। এ কারণে আমরা প্রতিবাদ করেছি। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন- এক শ্রমিক নেতার অভিযোগে ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলা প্রত্যাহার করা হবে। সে প্রস্তুতি রয়েছে। সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে- গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে দক্ষিণ সুরমা থানায় শ্রমিক নেতাদের আসামি করে মামলা করেন চিকনাগুলোর লেগুনা পরিবহন শ্রমিক নেতা শিহাব আহমদ। মামলায় তিনি আসামি করেন সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদসহ পরিবহন শ্রমিকদের শীর্ষ নেতাদের।

আর এতে তিনি উল্লেখ করেন- অবরোধের দিন ওই পরিবহন শ্রমিক নেতারা তাকে ও তার স্ত্রীকে আটকিয়ে মারধর, টাকা ছিনতাই করেছেন। পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন- মামলার এজাহারে যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওইদিন ওখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যে ঘটনার অস্তিত্ব নেই; এ ধরনের একটি কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে বাদী করে বর্তমান নেতৃত্বে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলা দায়েরের পর গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক নেতাদের একটি অংশ পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানালেও পুলিশ কমিশনার সেটি মানেননি।পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সড়কে ব্যারিকেড দেয়ায় হাজার হাজার যানবাহন সিলেটের রাস্তায় আটকা পড়ে। এ সময় ব্যারিকেড স্থল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয় শ্রমিকরা। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন- বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালমুখী রোগী, বিদেশগামী যাত্রীদের বাধা দেয়ার কারণে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় শ্রমিকরা যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। লাঠিসোটা নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করেন।

এতে করে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা এভাবেই রাস্তায় যাত্রীরা আটকা পড়েন। এতে করে গোটা নগরীই স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি। কেউ কেউ পায়ে হেটে গন্তব্যে যান। এই অবস্থায় রাত ১০টার দিকে দক্ষিণ সুরমায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর মধ্যস্থতায় মহানগর পুলিশের দক্ষিণ ও উত্তর অংশের উপ-পুলিশ কমিশনাররা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

ওই বৈঠকে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- গায়েবি ঘটনায় মামলা দেয়ার কারণে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিলো। এখন মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

এ কারণে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে ব্যারিকেড তুলে নেয়। তিনি বলেন- ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই আমরা আইনি লড়াইয়ে নামতাম। পুলিশ এক বহিষ্কৃত শ্রমিক নেতাকে ধরে এনে মামলা দিয়েছে। এটি সিলেটের সামাজিকতার সঙ্গে মানানসই নয়। এ কারণে আমরা প্রতিবাদ করেছি। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন- এক শ্রমিক নেতার অভিযোগে ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলা প্রত্যাহার করা হবে। সে প্রস্তুতি রয়েছে। সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button