বাংলাদেশবিএনপিরাজধানীরাজনীতি

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের প্রধানমন্ত্রী দেয়ার বক্তব্যে ফখরুলের প্রতিক্রিয়া

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের সমালোচনা করেছেন । তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, কোন মুখে এই কথা বলেন যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। আপনি যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, গণতন্ত্র চাওয়ায় সেই দেশের মানুষদের আপনি হত্যা করছেন।

তিনি বলেন, ‘আজকে বড় বড় কথা বলছেন বিদেশে গিয়ে। মার্কিনদের ওখানে গিয়ে বলছেন, যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চাই না যুদ্ধ পৃথিবীতে, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা।‘কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) মুখে এটা মানায় না। তিনি নিজে এদেশে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। সরকার যখন এই হত্যাগুলো করছে, গুম হয়ে গেছে ৬শ ওপরে মানুষ … ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম…।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যে দেশে আপনি বাস করেন, যে দেশের আপনি প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই দেশের মানুষদের আপনি হত্যা করছেন। তাদের একটিমাত্র অপরাধ তারা গণতন্ত্র চায়, তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়, ভোটাধিকার পেতে চায়, বেঁচে থাকতে চায়, মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চায়।’আপনারা আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছেন, পুলিশকে ব্যবহার করছেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছেন, প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন, মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে শত শত মানুষ তারা থানায় নিয়ে গিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে, সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এই কারণে আজকে একটা অত্যন্ত এলিড ফোর্স র‌্যাব যারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছিলো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এই সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে তাদেরকে আজকে নিষেধাজ্ঞা পড়তে হয়েছে, ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আন্দোলন এই সংগ্রাম, এই আত্মদান, এই রক্তপাত –এটা বিএনপির জন্য নয়, এটা পুরো জাতির জন্যে। আজকে সমস্ত জাতি একটা মহাসংকটে পড়েছে। আজকে ওরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে, পত্র-পত্রিকাগুলো কেউ সাহস করে সত্য কথাটা বলতে পারে না- এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। আজকে পত্র-পত্রিকায় আপনারা খেয়াল করে দেখবেন বেশ কতগুলো পত্রিকায় বলেছে যে, শহীদুল ইসলাম শাওন যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আওয়ামী পন্থি মিডিয়া বলছে যে, তাকে নাকী পেছন থেকে ইট মারাতে সে মারা গেছে।সারাদেশে জুড়ে আমরা আন্দোলন করছি জনগনের সমস্যাগুলো নিয়ে। এই আন্দোলনে ইতিমধ্যে আমাদের চারজন তরুণ যুবক প্রাণ দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পুরোপুরিভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। শুধু আংশিক নয়, পুরোপুরিভাবে একটা ভিন্ন নেগেটিভ একটা ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলো একদিনে নয়, দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম হয়েছে তাদের স্বাধীনতার জন্যে, তাদের স্বাধিকারের জন্য। সেই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগী নেতা তাদের অবদান আছে, আত্মত্যাগ আছে। ওই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় না।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘শুধু শাওন নয়, আন্দোলন শুরুর পরে আমাদের চার সন্তানের রক্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজকে রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু মানুষের যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে, এক শাওন, আবদুর রহিম, নুরে আলমের মৃত্যুতে সে অভ্যুত্থানকে দমন করা সম্ভব হবে না।’

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বন্দুকের গুলিতেই শহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম যুবদল কর্মীর বাবা ছোয়াব আলীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে। তুমি বল যে পেছন থেকে ইটের আঘাতে সে (শাওন) মারা গেছে, তুমি বল যে তাঁকে বিএনপির লোকেরাই মেরেছে। কিন্তু আমাদের কাছে পরিষ্কার ডকুমেন্ট আছে। তার ডেথ সার্টিফিকেটে ডাক্তারেরা পরিষ্কার করে বলেছেন, মৃত্যুর কারণ গুরুতর আঘাত, বন্দুকের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কাজেই মিথ্যাচার করবেন না। আজকে মিথ্যাচার করে, প্রতারণা করে জনগণকে বোকা বানিয়ে রেখেছেন। মানুষ আর তা সহ্য করতে রাজি নয়।’

এর আগে সমাবেশে নিহত এই যুবদল কর্মীর বাবা ছোয়াব আলী বক্তব্য দেন।বক্তব্যে ছোয়াব আলী বলেন, ‘কোন দেশে বাস করি, মৃত মানুষের নামে মামলা হয়। আমার ছেলেকে তারা গুলি কইরা মারছে, আবার মামলা দিছে।’ তিনি বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এর যে কী বোঝা, তা যে কাঁধে নেয়, সে বোঝে। এ সময় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দলের নেতা-কর্মীসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে পুরস্কার বিতরণীয় উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিজয়ী প্র্রতিযোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় স্মরক ক্রেস্ট ও সনদপত্র।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল মাহমুদ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button