অপরাধএক্সক্লুসিভখুলনাফরিদপুরবাংলাদেশ

উদ্ধারের ১৬ ঘণ্টা পর মুখ খুলেছেন আলোচিত গৃহবধূ রহিমা বেগম

উদ্ধারের ১৬ ঘণ্টা পর মুখ খুলেছেন খুলনার আলোচিত নিখোঁজ গৃহবধূ রহিমা বেগম (৫২)। তাঁর দাবি, নিজ বাসার নিচ থেকে ৪/৫ জন দুর্বৃত্ত মুখে কাপড় বেঁধে অপহরণ করে তাকে।রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টার দিকে সন্তানের মুখোমুখি করা হয় রহিমা বেগমকে। এ সময় তিনি এ দাবি করেন।

রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জের মুকছেদপুর হয়ে পূর্ব পরিচিত ভাড়াটিয়ার ফরিদপুরের বোয়ালখালী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে যান। কিন্তু তাঁর কাছে কোন মোবাইল নম্বর না থাকায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য যাচাই বাছাই করছি। তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু করা হবে।

পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব বাংলাদেশ (পিবিআই) খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বেলা আড়াইটার দিকে বলেন, শনিবার ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধারের পর থেকে কোন কথাই বলছিলেন না রহিমা বেগম। বেলা ১টার দিকে তাঁর সন্তানের মুখোমুখি আনা হয়। পরে তিনি অপহৃত হয়ে ছিলেন বলে দাবি করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা বেগমকে অপহরণের অজ্ঞাতস্থানে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন। জমি-জমার বিরোধ থাকা কিবরিয়া, মহিউদ্দিনসহ কয়েক ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ও বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তাঁকে একহাজার টাকা দিয়ে ছেড়ে দেয়।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে এসে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন খুলনার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২)। ওই বাড়ির লোকজনকে রহিমা বলেছিলেন, ছেলে–মেয়েদের ওপর রাগ করে তিনি ঘর ছেড়েছেন। তিনি আর বাড়ি ফিরতে চান না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথাও বলেছিলেন তিনি।

কুদ্দুস মোল্লা (৭০) কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন খুলনায় বসবাস করেছেন। তিনি খুলনার সোনালী জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। বছর দশেক আগে ওই পাটকল বন্ধ হওয়ার পর কুদ্দুস বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এই বাড়ি থেকেই গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগর পুলিশের একটি দল রহিমা বেগমকে উদ্ধার করেন।

শনিবার সকালে সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ির লোকজন ও আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটা বা সাড়ে চারটার দিকে একটি বাসে করে রহিমা বেগম সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড নামেন। তখন তাঁর হাতে একটি ব্যাগ ছিল।

তিনি এসে ওই বাজারের মুদিদোকানদার ইউনুস বিশ্বাসের কাছে মোতালেব মুসল্লির (কুদ্দুস মোল্লার বাবা) বাড়ি কোথায় জানতে চান। তখন ইউনুস বিশ্বাস রহিমার পরিচয় জানতে চান। রহিমা বেগম বলেন, তিনি বরিশাল থেকে এসেছেন, তিনি কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরার চাচাতো বোন। তখন ইউনুস এক শিশুকে সঙ্গে দিয়ে তাঁকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

কুদ্দুস মোল্লার জামাতা নূর মোহাম্মদ বলেন, রহিমা বেগম কেন এবং কী কারণে বাড়িতে এসেছেন, তা তিনি তাঁর শাশুড়ি হীরার কাছে জানতে চান। হীরা জানান, তাঁরা যখন খুলনা ছিলেন তখন রহিমার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে তিনি বেড়াতে এসেছেন।

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন সন্তানেরা।

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে 

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button