দুর্ঘটনাপঞ্চগড়বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীর তীরে বিমর্ষ মানুষের ভিড়

করতোয়ায় কত জল? তা যেমন মাপা যায় না, তেমন স্বজনহারা শত শত মানুষের অশ্রুও পরিমাপ অযোগ্য। সোমবার সারাদিন পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীর তীরে দেখা গেছে বিমর্ষ মানুষের ভিড়। তারা নৌকাডুবিতে নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ পেয়েছেন লাশ। কেউ তাও নয়। এখনও স্বজনদের বিলাপে ভারী হয়ে আছে এই নদী তীর।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করোতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ আরো তিনজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশের সবার পরিচয় প্রকাশ করেছে প্রশাসন।পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোলেমান আলী বিষয়টি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার সারাদিনই বেড়েছে নিহতের সংখ্যা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একে একে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। রোববার আরও ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছিলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।গতকাল রাত নয়টা নাগাদ মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়াল। তাদের মধ্যে ২৩ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। এখনও ৩৫ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তাদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপ পরিচালক শেখ মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘সকাল থেকে পঞ্চগড় এবং আশপাশের জেলার আটটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। এর বাইরে রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং রাজশাহী থেকে তিনটি ডুবুড়ি দলে মোট ৯ জন ডুবুরি উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। ’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই ঘটনাস্থল করতোয়ার আউলিয়া ঘাট ও এর আশপাশে নিজ উদ্যোগে নিখোঁজদের খোঁজ শুরু করেন স্বজনেরা। তাদের চোখের জল সময়ের সাথে যতই বেড়েছে, ততই কমেছে বুকের বল ও আশা। স্বজনের খোঁজে কেউ কেউ পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটছেন। কেউ বোনের জন্য গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদেন। কেউ ভাইয়ের লাশের সামনে মাতম করেন। করতোয়া পাড়ে স্বজন হারানোর এই বিলাপে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না কেউ।

রোববার দুপুরে বোদা বদ্বেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উৎসব উৎযাপন করতে নৌকায় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী মাড়েয়া এলাকা থেকে বদ্বেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায়  আওলিয়া ঘাটের করতোয়া নদীর মাঝে যাত্রীসহ ডুবে যায় নৌকাটি।

ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। স্বজনদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এখনও অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।এ ঘটনাটি তদন্ত করতে রাতে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায়কে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ওই নৌকার ধারণক্ষমতা ছিল ৫০-৬০ জনের। তিন গুণের বেশি যাত্রী নিয়ে যাত্রার কিছুদূর যাওয়ার পরই দুলতে থাকে নৌকাটি। এ সময় মাঝি নৌকাটি তীরে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আতঙ্কিত যাত্রীদের হুড়াহুড়িতে নৌকাটি ডুবে যায়। যাত্রীদের অধিকাংশ সনাতন ধর্মের অনুসারী। তারা শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে ওই মন্দিরে যাচ্ছিলেন।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button