এক্সক্লুসিভবাংলাদেশবিএনপিমুন্সিগঞ্জরাজনীতি

মুন্সিগঞ্জে পুলিশ–বিএনপি সংঘর্ষে নিহত শাওনের পরিবার আতঙ্কে

‘আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা তাদের চিনি না। যারা হুমকি দিচ্ছে, তারা বলছে আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মরেনি। আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তারা পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার অভিযোগ পাল্টে ইটের আঘাতে মারা গেছে, এমন মামলা দিতে বলছে।

আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার আরও তিনটা ছেলে আছে। আমার স্বামী আছে। আমি তাদের হারাতে চাই না। আমি নিরাপত্তা চাই।’শাওন গুলিতেই মারা গেছেন উল্লেখ করে লিপি আক্তার বলেন, ‘যারা বলছে আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিও দেখুক, যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখন আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের মৃত্যুর কারণ–সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।’

মুন্সিগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে নিহত শহিদুল ইসলাম ওরফে শাওন ভূঁইয়ার মা লিপি আক্তার গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। তিন আরও বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে মুঠোফোনে কল করে তাঁদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তাঁরা ও তাঁদের স্বজনেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আতঙ্কে তাঁর তিন ছেলে ও স্বামীও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের কাছের মুক্তারপুরে গত বুধবার বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে শাওন ভূঁইয়া ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওনের মৃত্যু হয়।

শাওন ভূঁইয়ার (২৬) বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা গ্রামে। তিনি ওই এলাকার ছোয়াব আলীর বড় ছেলে। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। শাওন মিরকাদিম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী হিসেবে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

গতকাল দুপুরে মুরমা এলাকায় ঢুকতেই থমথমে পরিস্থিতি দেখা যায়। শাওনের বাড়িতে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। শাওনের বাবা–চাচাদের ঘরগুলো নীরব। বাড়িতে নারীরা থাকলেও নেই কোনো পুরুষ।শাওনদের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা, দাদি, ফুফু ও কয়েকজন নারী নির্বাক হয়ে বসে আছেন। শাওনের স্মৃতি মনে পড়লে ঢুকরে কেঁদে উঠছেন তাঁরা।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শাওনের পরিবারের দায়িত্ব আমাদের। তাঁর পরিবারের সুখ–দুঃখ—সবকিছুতে বিএনপি পাশে থাকবে। মামলা করা না–করা এটা তাঁর পরিবারের ব্যপার। তারা এ সরকারের কাছে নয়, আল্লাহর কাছে বিচার চায়।’

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, সামগ্রিক বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে। এরপরও যেসব বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে, সেগুলো আদালতকে জানানো হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না দেওয়ার জন্য শাওনের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শাওনের দাদি হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা কার বিরুদ্ধে মামলা করব?’ পুলিশের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যাদের বিচারে সহযোগিতা করার কথা ছিল, মামলা করলে তাদের বিরুদ্ধেই করতে হবে। মামলা করলে আমার নাতি ফেরত আসবে না। উল্টো আমাদের অনেক অসুবিধা হবে। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দেব। আল্লাহই বিচার করবে।’

বুধবার বিএনপির কর্মসূচিতে মিছিল নিয়ে আসছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জন সংবাদকর্মী ও ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির ১ হাজার ৩৬৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button