নির্বাচন কমিশনের আগের ২৮ হাজার ইভিএম ব্যবহার অনুপযোগী

নির্বাচন কমিশন গত চার বছরে সারা দেশের আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলোতে মোট ৯৩ হাজার ইভিএম পাঠিয়েছিল। এর ৩০ শতাংশ বা প্রায় ২৮ হাজার ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় অকেজো বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এখন ইসি বলছে, ওই ইভিএমগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে যায়নি। মেরামত করে আবার ব্যবহার করা যাবে। ইতিমধ্যে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থা হয়েছে বলে মনে করে ইসি।চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ঢাকার বাইরে থাকা ইভিএমগুলোর অবস্থা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন ইভিএম প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

তাতে দেখা গেছে, যে ৩০ শতাংশ ইভিএম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগের বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার (একধরনের সরঞ্জাম) সংক্রান্ত সমস্যা আছে। কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে বা হারিয়ে গেছে। এর বাইরে ৪৫ হাজার ৫০০টি ইভিএম রাখা হয়েছে কাগজের প্যাকেটে। এগুলোর মান নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। কমিশন এখনো এগুলোর মান যাচাই করেনি।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (২০১৮ সালে) আগে ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেয় নির্বাচন কমিশন। ওই প্রকল্পের অধীনে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনা হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৯৩ হাজার বিভিন্ন আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

এর বাইরে ৫৪ হাজার ৫০০ ইভিএম রাখা আছে গাজীপুরে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ)। আর ২ হাজার ৫০০টি ইভিএম আছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে। ওই প্রকল্পে ইভিএমের ১০ বছরের ওয়ারেন্টি (বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা) থাকার কথা বলা হয়েছিল।

ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ৩০ শতাংশ ইভিএম একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, তা নয়। এগুলো মেরামতযোগ্য। অনেকগুলোর কেব্‌ল (তার) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাটারি অকার্যকর হয়েছে, কিছু মনিটর নষ্ট হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ইভিএমে আঙুলের ছাপ নেওয়ার যে স্ক্যানার (ইভিএমে যুক্ত একধরনের যন্ত্রাংশ) ভালোভাবে কাজ করছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাটন (যেখানে চাপ দিয়ে ভোট দেওয়া হয়) নষ্ট হয়েছে। মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে ১০ হাজার ইভিএম গাজীপুরে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হয়েছে।

যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এমন জায়গায় ইভিএমগুলো রাখা হয়েছে, যেখানে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ইভিএম কিনতে নতুন যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, তাতে এই যন্ত্র সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউসে (গুদামঘর) রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ইভিএমগুলোর পাঁচ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি (বিক্রির পর নষ্ট হলে মেরামত করে দেওয়ার নিশ্চয়তা) এবং সব যন্ত্রাংশের এক বছরের গ্যারান্টি (নিশ্চয়তা) আছে। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে পাঠানো সব ইভিএমই আছে।নির্বাচনের জন্য এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় অনেক ইভিএম স্থানান্তর করা হয়, যেগুলো ‘ট্র্যাক’ (শনাক্ত) করা হয়নি। যে কারণে সংখ্যার কিছু গরমিল দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইভিএম প্রকল্পে কেনা যন্ত্রগুলো সংরক্ষণের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ইসির মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন কার্যালয়ে জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। যে কারণে ৩০টি জেলায় গুদাম ভাড়া নেওয়া হয়েছে। অন্য জেলাগুলোতেও গুদাম ভাড়া নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে ইভিএমের আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সামনের দিনে নির্বাচনে ব্যবহারযোগ্য ইভিএমের ঘাটতি তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা আছে।

ইসি সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে যে পরিমাণ ইভিএম মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল আর মাঠ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে—এই দুয়ের হিসাবে পার্থক্য রয়েছে। ইভিএম প্রকল্প থেকে মাঠপর্যায়ে ৯৩ হাজার ৪১০টি ইভিএম মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মাঠপর্যায় থেকে ৮০ হাজার ১৭০টির তথ্য পাওয়া গেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ইসিতে নিবন্ধিত চারটি দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। অন্যদিকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বেশির ভাগ দল ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। এমনকি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টিরও ইভিএমের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নেই। এরপরও ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইসি।

Exit mobile version