কর্মস্থলে তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশের শ্রমিকরা

প্রতি বছরের মতো ওয়াশিংটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর প্রকাশ করলো শিশু শ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদন-২০২২। এতে বিশ্বের মোট ১৩১টি দেশের তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯টি দেশের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য। আর বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশের অগ্রগতি মাঝারি। 

গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর প্রকাশিত শিশু ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদনে থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকরা তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনও শ্রমিকদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শ্রম খাতের সংস্কারে বাংলাদেশের মাঝারি মাত্রার অগ্রগতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশজুড়েই তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। বিপজ্জনক এ খাতের শ্রমিক নির্যাতনের ব্যাপকতা ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর সামনে আসে। এরপর কিছু সংস্কার হলেও বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক শ্রম, আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গিয়ে কাজ করা, জোরপূর্বক ওভারটাইম করানো এবং ক্ষতিপূরণ আটকে রাখার মতো ঘটনা ঘটছে।

এছাড়া সুপারভাইজারদের হাতে কর্মীরা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাজ করছেন।

শিশু ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদনে ১৩১টি দেশের পরিস্থিতি প্রকাশ করেছে মার্কিন শ্রম দপ্তর। এতে বলা হয়, নয়টি দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আর ৭৩টি দেশের মাঝারি অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। ৩৭ দেশের খুবই সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। আর নয়টি দেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

২০২২ সালে বাংলাদেশ শিশু শ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম বন্ধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৩৮ নম্বর সনদ গ্রহণ করেছে। তবে এখনও শিশুরা যৌনকর্মী, ইটভাটা এবং শুঁটকি শিল্পের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে জড়িত। এরা তৈরি পোশাক ও চামরাজাত পণ্য, চিংড়ি, সাবান, লবণসহ ১৪ শিল্পে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গেও জড়িত শিশুরা। সেই সঙ্গে অনানুষ্ঠিক খাতে কর্মরত শিশুদের জন্যে নেই আইনি সুরক্ষা।

প্রতিবেদনটি বলছে, করোনার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুদের মিয়ানমারের কারিকুলামে শিক্ষা দেয়া বন্ধ হয়েছে। এছাড়াও জান্তা সরকার দেশটিতে শিশুদের সর্বোচ্চ ঝুকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণে বাধ্য করছে, এমনটিস্বচিত্র প্রতিবেদনও দেখানো হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৯ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমের সঙ্গে জড়িত। ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে যায়। আর ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ শ্রম ও শিক্ষা, এ দুইয়ের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া অবৈধ কাজেও শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মাদক পাচার ও বিক্রি, জোরপূর্বক ভিক্ষা ও যৌনকর্মীর মতো কাজগুলোয় শিশুদের যুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌনদাস হিসেবে মানব পাচারের জন্য সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে বাংলাদেশসহ ১০টি দেশে শিশুশ্রম, শিশুদের যৌন পেশায় অন্তর্ভুক্তি এবং ঋণের কারণে জোরপূর্বক শ্রম বন্ধের ঘটনায় শাস্তির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Exit mobile version