ভিন্ন স্বাদের খবর

বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড চেয়ে অনুরোধের দাবিতে উপহাসের ইস্যুতে ক্ষোভ ভারতে

পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যে ইউনিসেফের আয়োজনে এক ওয়ার্কশপে একজন টিনেজার স্কুলছাত্রীর বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড চেয়ে অনুরোধের দাবি নিয়ে উপহাস করেছেন বিহারের একজন সরকারি কর্মকর্তা। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

ঐ ছাত্রীর আবেদনের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এরপর ছাত্রীরা শিগগিরই সরকারের কাছে বিনামূল্যে পোশাক, জুতা এমনকি কনডম পর্যন্ত প্রত্যাশা করবে।

ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের মতে, সেখানে নারীদের শতকরা মাত্র ৫৯ ভাগ ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। মঙ্গলবার রাজ্যটির রাজধানী পাটনায় আয়োজন করা হয় ‘সশাক্ত বেটি, সমৃদ্ধ বিহার’ অনুষ্ঠান।ঐ অনুষ্ঠানে সিনিয়র কর্মকর্তা হারজট কাউর ভামরা’কে একজন ছাত্রী প্রশ্ন করেন, মেয়েদের জন্য সরকার কি বাজারের ২০ থেকে ৩০ রুপির স্যানিটারি প্যাড বিনামূল্যে দিতে পারে কিনা। ওই ছাত্রী তার স্কুলে ভাঙা টয়লেট নিয়েও কথা বলেন। জানান, তা ব্যবহার করা কঠিন। অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের বেশির ভাগই ছিল ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছাত্রী।

ঐ ছাত্রীর প্রশ্নে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ হন মিসেস হারজট কাউর ভামরা। তিনি একই সঙ্গে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র আমলা এবং রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন করপোরেশনের প্রধান। ঐ ছাত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, তোমাকে কেন সব কিছু সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে? এই রকম চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে হবে। এটা তোমাকে নিজে করতে হবে। অর্থাৎ নিজের টাকায় স্যানিটারি প্যাড কিনতে হবে।

এই কর্মকর্তার এ বক্তব্যের কারণে জিদ ধরে ওই টিনেজার ছাত্রীও। সে এ বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে ভোট দেয়ার আহ্বান জানায়। এ সময় আরও ক্ষেপে যান মিসেস ভামরা। তিনি বলেন, এটা সর্বোচ্চ বোকামি। ভোট হবে না। তারপর, পাকিস্তান হয়ে যাবে। তোমরা কি অর্থ এবং সেবার জন্য ভোট দাও?

ঐ কর্মকর্তার সঙ্গে শিক্ষার্থীর এ কথোপকথন দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ এতে ঐ কর্মকর্তার বক্তব্যকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, সরকারি পদের অযোগ্য ঐ কর্মকর্তা।

পরে মিসেস ভামরা বলেন, ঐ অনুষ্ঠান নিয়ে যে রিপোর্ট হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুল। তিনি এ বিষয়ে একটি হিন্দু পত্রিকার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।ঐ পত্রিকাটি ওই কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়ে রিপোর্ট করেছিল।

মিসেস ভামরা বলেন, নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে মুখর, তাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে আমি পরিচিত। আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য একটি অসাধু গোষ্ঠী দায়ী।

অনলাইন বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মাসিক ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্যসুবিধার অভাব আছে ভারতে।মেয়েদের ঋতুস্রাব ভারতে অনেকের চোখে খারাপ। অনেক মানুষ এটাকে ভালচোখে দেখেন না। কখনো কখনো ঋতুস্রাবের সময় নারীরা নিষ্ঠুর, অমানবিক পরিস্থিতিতে বসবাস করতে বাধ্য হন। অথচ, এই ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রে কোনো নারীর কোনো হাত নেই। প্রকৃতি প্রদত্ত। তারপরও নারীর প্রতি এই অবহেলা, অসম্মানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রতিবাদ হয়েছে, হচ্ছে। এ জন্য ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পরই প্রতিবছর ভারতে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মেয়ে। ভারতে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর অন্যতম বিহার।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button