ইউক্রেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত চার অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ শুক্রবার ক্রেমলিনে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি। খবর আল–জাজিরা ও বিবিসির।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তারা করতালি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পুতিনের এই ঘোষণাকে সমর্থন জানান। এরপর ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত রুশ সেনাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, নিহত এই সেনারা রাশিয়ার নায়ক। স্বদেশের জন্য তাঁরা নিজেদের জীবন দিয়েছেন।
রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা ইউক্রেনের এই চার অঞ্চল হলো খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে এ অঞ্চলগুলোতে গণভোটের আয়োজন করেছিল মস্কো। গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলে ওই ভোট।
গণভোটে ওই চার অঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে রুশ গণমাধ্যমগুলোর খবরে উল্লেখ করা হয়। যদিও ইউক্রেন ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা প্রথম থেকে এ গণভোটকে ‘ভাঁওতাবাজি’ আখ্যা দিয়ে আসছে।
খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রাশিয়ার ‘নতুন অঞ্চল’ ঘোষণা দিয়ে পুতিন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে রুশ ফেডারেশনের নতুন এই চার অংশকে ফেডারেল অ্যাসেম্বলি সমর্থন জানাবে। কারণ, এটা লাখ লাখ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল।’
ইউক্রেন এবং তার মিত্র দেশগুলো অবশ্য গণভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, কথিত গণভোটের অজুহাত দেখিয়ে এসব অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে।মস্কোসহ রাশিয়ার ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে অসংখ্য বিলবোর্ডও স্থাপন করা হয়েছে। সেসব বিলবোর্ডে লেখা হয়েছে “দোনেতস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসন— রাশিয়া।”
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিউইয়র্ক সিটিতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সংযুক্তি জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন করবে এবং এর কোন আইনি মূল্য নেই।গুতেরেস রাশিয়ার পদক্ষেপকে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের ‘একটি বিপজ্জনক বৃদ্ধি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন যার আধুনিক বিশ্বে কোনও স্থান নেই।
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার তার বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র কখনই ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার দাবিকে স্বীকৃতি দেবে না।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ এরদোগানও ইউক্রেনে উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে পুতিনকে চাপ দেন।
এছাড়াও, ইউক্রেন-সহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার তার জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এছাড়াও ইউক্রেনজুড়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছেন বলে জানা গেছে।