জ্বালানীসংকটে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ

অক্টোবর থেকে লোডশেডিং পুরোপুরি কমবে বলে জানিয়েছিল সরকার। উল্টো এ সময়ে এসে বেড়ে গেছে লোডশেডিং। জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। পড়ে থাকছে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা। আর ঘরে ও শিল্পে মানুষ ভুগছেন বিদ্যুতের অভাবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কমানো হয়েছে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমেছে। বিল বকেয়া বাড়তে থাকায় তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদামতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আগাম শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কমার ভরসায় ছিল সরকার। গরম না কমায় সেটিও কাজে আসেনি। তাই অক্টোবরে লোডশেডিং বন্ধ করার পুরোনো সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।

এর আগে ডলার–সংকটে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ১৯ জুলাই থেকে শুরু হয় পরিকল্পিত লোডশেডিং। যদিও জুলাইয়ের শুরু থেকেই লোডশেডিং ছিল। দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও তা মানা হয়নি। রাজধানীতে গড়ে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও লোডশেডিং ছিল আট ঘণ্টা পর্যন্ত। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় কিছুটা কমলেও অক্টোবরে আগের চেয়ে বেড়ে গেছে লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। এখন তা বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না এখন। আর ঢাকার বাইরে কোনো কোনো এলাকায় ৭ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ময়মনসিংহ বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না।

গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে এখন। ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এটি নিশ্চিত করেছেন।

তাঁরা বলছেন, জুলাই মাসে দিনে একবার লোডশেডিং করার কথা থাকলেও তা দুই থেকে তিনবার করতে হয়েছে। অক্টোবরে চাহিদা কমার বদলে আরও বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, ভারত থেকে আমদানির বাইরে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৯ হাজার ৫৩৭ মেগাওয়াট। দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। আর এখন চাহিদা আছে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছে না শিল্পকারখানা।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হচ্ছে। গত তিন মাসে এমন পরিস্থিতি হয়নি। কোথাও কোথাও এখন দিনে পাঁচবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডেসকোর এমডি আমির কাউসার আলী। তিনি বলেন, দিনে ৩০০ মেগাওয়াটের মতো সরবরাহ ঘাটতি হচ্ছে। কোনো কোনো ফিডারে (নির্দিষ্ট গ্রাহক এলাকা) দিনে চারবার পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, শিল্পে কিছুটা বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি হিসেবে পাওয়া টাকা নিয়মিত ছাড় করছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। জ্বালানি আমদানি করতে ডলারও পাওয়া যাচ্ছে না নিয়মিত। জ্বালানি তেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকেও সক্ষমতা অনুসারে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়েক মাস ধরে বিল পাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দামও কমছে না বিশ্ববাজারে। ডলার সাশ্রয়ের কারণে এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং বন্ধ করা যায়নি। এটি আরও কিছুদিন চালু রাখতে হবে।

Exit mobile version