আগামীকাল থেকে বিএনপির চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরু

বিএনপির চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি আগামীকাল বুধবার চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে। নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠের এদিন সমাবেশে প্রায় ১৫ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা নেতা–কর্মীদের। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চান তাঁরা।

ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে হয়েছে। তৈরি হয়েছে মঞ্চ। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।তবে বসে নেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগও। সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করার, সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অকারণে কাউকে পুলিশ হয়রানি করবে না। কিন্তু কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে এ সমাবেশ কাল বেলা দুইটায় পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের নেতা–কর্মীরা এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন।

চট্টগ্রামে সমাবেশের দিনক্ষণ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকে নগর ও জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড চষে বেড়িয়েছেন নেতা–কর্মীরা। করেছেন সভা। এতে তাঁরা বিপুল সাড়া পান। প্রথমে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, নগরের লালদীঘি মাঠ ও জেলা পরিষদ চত্বরে এই সমাবেশ করার পরিকল্পনা ছিল দলটির। কিন্তু নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উৎসাহ দেখে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নেতা–কর্মীদের ধরপাকড়ের শিকার কিংবা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে সমাবেশে আসতে থাকা নেতা–কর্মীরা বাধার সম্মুখীন হননি। তবে খাগড়াছড়িসহ কয়েকটি জায়গায় ভাড়া করা বাসচালকেরা চট্টগ্রামে আসতে অপারগতা জানিয়েছেন। সরাসরি পুলিশ বা আওয়ামী লীগের কর্মীরা এ ক্ষেত্রে বাধা দেননি।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয়ে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এ ধাপের কর্মসূচি আগামী ১০ ডিসেম্বর শেষ হবে। এর আগে প্রথম ধাপে ২২ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলা ও গ্রেপ্তার এড়াতে দলবদ্ধভাবে নেতা–কর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বলেছেন নেতারা। কাউকে লাঠি নিয়ে আসতে বারণ করা হয়েছে। সমাবেশে বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সে জন্য স্থানীয় একজন নেতার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কর্মীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি একেকজন নেতা কতজন কর্মী সমাবেশে নিয়ে আসবেন, সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন দায়িত্বশীল নেতারা। এ জন্য দুই সপ্তাহ ধরে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সভা ও বৈঠক হয়।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি সহিংসতার চেষ্টা করলে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিহত করবে বলে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ।

সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়া হলে কী প্রস্তুতি রয়েছে, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাঠি নিয়ে আসবেন না।তাঁরা একেকজন লাঠি, চায়নিজ রাইফেলের মতো শক্তিশালী। যাদের দুর্বলতা আছে, তারাই লাঠি নিয়ে মাঠে নামে। বিএনপির শক্তি জনগণ। আর তাদের শক্তি হলো অন্য জায়গায়।

নিজেদের দুর্বলতা রয়েছে বলে তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো দল যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেয়, বুঝতে হবে তাদের পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে।’

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘সেই নিরপেক্ষ সরকারকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশন দেশের নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে। জনগণের নির্বাচিত সংসদ হবে; যার জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে। এটাই মূল বার্তা।’

পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশ জনস্রোতে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই জনস্রোত থেকে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য হতে বার্তা দেওয়া হবে। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচনী সব ব্যবস্থার যে জঞ্জাল, সেটা পরিষ্কার করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে।’

এদিকে সমাবেশ ঘিরে বিএনপি সহিংসতার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের প্রতিহতের ঘোষণায় পুলিশের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় আজ দুপুরে বলেন, সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার, সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশ অহেতুক কাউকে হয়রানি করবে না। তবে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে।

গত সোমবার রাতে চারজনকে বাকলিয়া থানা-পুলিশের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, নিয়মিত মামলার আসামিকে পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই আসে না।পুলিশ সূত্র জানায়, পলোগ্রাউন্ড মাঠ ঘিরে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি), সাদাপোশাকধারীসহ পুলিশের সাড়ে চার শ সদস্য নিরাপত্তায় থাকবেন। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন প্রবেশমুখসহ সড়কগুলোতে পুলিশি পাহারা থাকবে।

আজ থেকে ১০ বছর আগে ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি এই মাঠে জনসভা করেছিল বিএনপি। সেই সভায় প্রায় ১৫ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন পর বড় মাঠে জনসভা করতে পেরে উচ্ছ্বসিত নেতা–কর্মীরাও। আজ দুপুরে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয় ও পলোগ্রাউন্ড মাঠে কিছু নেতা–কর্মীকে দেখা গেছে। তাঁরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাসহ স্থানীয় নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সমাবেশের জন্য কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, এবারের সমাবেশ সারা দেশে চমক হবে। যেখানে গেছেন, সেখানে মানুষ প্রতিবাদ জানাতে এই সমাবেশে শামিল হবেন বলে  জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জনস্রোতে পরিণত হবে পলোগ্রাউন্ড মাঠ। জ্বালাও–পোড়াও নয়, জনস্রোতের এই শক্তিই সরকারকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। দেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক হবে। পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশকে অন্য জেলার কর্মীরা অনুকরণ করবেন। চাঙা হবে বিএনপির আন্দোলন।

Exit mobile version