অধিকার ও মর্যাদাএক্সক্লুসিভজাতীয়ঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

গ্রামে টিকতে না পেরে ঢাকায় এসেছি

কাজের সন্ধানে ঢাকামুখী মানুষের ঢল। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাটে প্রতিদিন নামছে শত শত মানুষ। গ্রামে এখন কোনো কাজ নেই। কিছুদিন আগে পেরিয়ে গেছে  বোরো মওসুম। এরপর থেকে দিন মজুররা বেকার। শুধু তাই নয়, গ্রাম থেকে ছুটে আসছে শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত বেকার যুবকও। স্বপ্নের ঢাকায় একটি কাজের খোঁজে রাত দিন হন্য হয়ে ঘুরছে।

নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার বাসিন্দা আল আমিন। প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন কাজের সন্ধানে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় তার সঙ্গে। আল আমিন জানান, গ্রামে শীতের মৌসুম আসলে কোনো কাজ থাকে না। ফসল চাষ করতে পারেন না। তাই ঢাকায় আসেন কাজের সন্ধানে।

কিন্তু কৃষিকাজ ছাড়া কোনো কাজের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এক সপ্তাহেও কিছু করতে পারেননি। রিকশা চালানোর অভ্যাসও নেই তার। পরে গ্রামের এক প্রতিবেশীর পরামর্শ নিয়ে ঢাকা থেকে বিক্রমপুরে যান কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানেও তিনি কোনো কাজ পাননি।

অবশেষে ফের ট্রেনে করে গ্রামে চলে যাচ্ছেন তিনি। আল আমিন বলেন, কাম না থাকলে সংসার চলে না। কষ্ট হয়। খামু কি? পোলাপানের জন্য কষ্ট হয়। বিক্রমপুর গেছিলাম। সেখানে ৫০ জনের মধ্যে ৪-৫ জন কামে নিছে। বাকি কেউ কাম পায় নাই।

রাশেদুল ইসলাম। বয়স ১৭ ছুঁই ছুঁই। গ্রামের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পশ্চিম বামনা গ্রামে।ইসলামপুর গোঠাইল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমান। পড়ালেখার স্বপ্ন মাটিচাপা দেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঢাকায় আসেন রাশেদ।

তিনি বলেন, কদিন খেয়ে না খেয়ে শনির আখড়ায় রডমিস্ত্রির হেলপার হিসাবে কাজ শুরু করি। গ্রামে পড়ালেখা করতাম। সেখানে লজ্জায় কোন ছোট কাজ করতে পারি না। তাই ঢাকায় এসে রডমিস্ত্রির কাজ করছি। এখানে পরিচিত কেউ দেখবে না। অর্থের অভাবে লেখাপড়াকে মাটিচাপা দিয়েছি। নির্মাণাধীন যে বাড়ির কাজ করেন সেখানেই রাত কাটান। দৈনিক মজুরি পান ৭০০টাকা। এ থেকে নিজের খরচ চালিয়ে সপ্তাহ শেষে বাড়ি পাঠান বাকি টাকা।

রনির বয়স বিশ বছর। তিনি মহাখালী বাস টার্মিনালের খানিকটা দূরে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছেন। সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন। আগে অনেকবার ঢাকায় বেড়ানোর উদ্দেশে আসলেও এবার কাজের জন্য এসেছেন।

রনি বলেন, বোনের বাসা মোহাম্মদপুরের বসিলায় যাবো। সকালের নাস্তা করতে এখানে বসেছি। বাড়িতে বয়স্ক বাবা আছে। তিনি আগে ব্যবসা করতেন। এখন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেন না। আমরা ৪ ভাইবোন। বোনের স্বামী ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসা করে। আমিও তার সঙ্গে ব্যবসা শিখতে চাই। পরিবারের হাল ধরতে চাই।

জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসেছেন আসিফ আলম। বয়স ১৬ কি ১৭ হবে। সংসারের চাপে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। আসিফ বলেন, আমি ক্লাস সেভেন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। এরপর করোনা আসায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর ফিরে যাইনি।

আব্বার বয়স অনেক হয়েছে। তিনি আর আগের মতো খাটতে পারেন না। তাই আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। এসময় আমাদের গ্রামে আমন ধানের চাষ হয়। ধানের মুকুল ওঠার আগ পর্যন্ত কীটনাশক দিতে হয়। উঁচু জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হয়। এগুলো আব্বা একাই করতে পারবেন।

কার্তিক মাসের শেষে আর অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে আবার ধান কাটার সময় হবে। তখন আবার গ্রামে চলে যাবো। বাজারের সবকিছুর দাম বাড়তি। আগের বছর এই সময়েও মাছ-মাংসের দাম যা ছিলো তার থেকে প্রায় অর্ধেক দাম বেড়েছে। শাক-সবজির দামও চড়া।  আমার চাচাতো ভাই মিরপুরের একটি ভবনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। সে আমাকে এই কাজের খোঁজ দেয়। তার মাধ্যমে এই কাজের সন্ধান পেয়ে ঢাকায় চলে এলাম।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button