অপরাধশিক্ষাঙ্গন

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাথরুমে ক্যামেরা স্থাপন করে ছাত্রীদের নগ্ন ভিডিও ধারণ

শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান তার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিকৃত রুচির কারও কারণে সে স্থানই ছাত্রীদের কাছে হয়ে উঠতে পারে অনিরাপদ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের যৌন হয়রানির নানা ঘটনা বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে।

তবে আশা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আশরাফুল হক চৌধুরী ওরফে তানভীর যা করেছেন, তা এককথায় নজিরবিহীন। তার পরিকল্পনায় রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরেই একের পর এক ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে কর্মচারী আমিনুল ইসলাম। এর পর সেই ভিডিও দেখিয়ে ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করেন তানভীর। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে তাদের মানসিকভাবে নাজেহাল করা হতো। শিক্ষাজীবন শেষ না করেই বিদায় নিতে হবে—এমন হুমকিও পেয়েছেন কেউ কেউ।

জানা যায়, আশা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সফিকুল হক চৌধুরীর ছেলে আশরাফুল হক চৌধুরী ওরফে তানভীর। বাবার মৃত্যুর পর ইউনিভার্সিটির হাল ধরেন তিনি। রেজিস্ট্রার পদে থাকলেও মূলত তার নির্দেশনায়ই বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ইউনিভার্সিটিটি। ছাত্রীদের নগ্ন ভিডিও ধারণসহ তানভীরের নানা অপকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ে ওপেন সিক্রেট হলেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কৌশলে মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বাথরুম থেকে কমপক্ষে ৫০ মেয়ের নগ্ন ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এ ধরনের ২০টি ভিডিও কালবেলার কাছে এসেছে। এসব ভিডিও দেখিয়ে তানভীরের ব্ল্যাকমেইল চেষ্টার দুঃসহ বর্ণনা দিয়েছেন কয়েকজন ছাত্রী।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রীরা যেসব বাথরুম ব্যবহার করেন, সেসব বাথরুম থেকেই গোপনে মোবাইলে ধারণ করা হয় এসব ভিডিও। তানভীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ আশা ইউনিভার্সিটির এমএলএসএস আমিনুল ইসলাম কৌশলে বাথরুমের ভেতর ক্যামেরা স্থাপন করে রাখত।

ভিডিও ধারণ শেষে তা কম্পিউটারে নিয়ে এডিট করে ফাঁকা অংশ কেটে ফেলে শুধু ছাত্রীদের অংশটুকু রেখে দেওয়া হতো। এরপর শুরু হতো ব্ল্যাকমেইল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মচারী অনৈতিক এ কাজের বিষয়টি জানত। তবে আমিনুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছের লোক হওয়ায় কেউই মুখ খুলত না।

শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও বীরদর্পে আশা ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন তানভীর চৌধুরী। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্য সদস্যদের পাত্তাই দেন না তিনি। তার সিদ্ধান্তের বাইরে আশা ইউনিভার্সিটিতে কোনো নিয়োগ বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না।

এই প্রতিবেদক বিভিন্ন সূত্র থেকে অন্তত ২০ ছাত্রীর ভিডিও সংগ্রহ করেছে, যার সবই আশা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বাথরুম থেকে ধারণ করা। তবে সামাজিকভাবে সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভুক্তভোগীরা কেউই মুখ খুলছেন না। প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। বেশিরভাগই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

আমিনুল ইসলামের স্বীকারোক্তির একটি ভিডিওতেই উঠে এসেছে রেজিস্ট্রারের অপকর্মের বিবরণ। আমিনুল জানায়, রেজিস্ট্রার তানভীরের নির্দেশেই সে বাথরুমে মোবাইলে ভিডিও ক্যামেরা চালু করে রেখে আসত। এর পর মোবাইলে ধরা পড়ত ছাত্রীদের নানা ভিডিও।

আমিনুল দাবি করে, প্রতি ভিডিওর জন্য তাকে তিন-চারশ টাকা দিতেন তানভীর। এ ছাড়া চাকরি করতে হলে এ ধরনের ভিডিও করতে হবে—এ কথা বলে তাকে চাপে রাখা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কর্মচারী হয়ে মালিকের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সাধ্য ছিল না তার।

আশা ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, অনেক ছাত্রী হয়তো নিজেরাই জানেন না, তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এর পর ক্লাসে কম উপস্থিতি বা অন্য কোনো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করা হতো। আর যারা এরই মধ্যে ভুক্তভোগী হয়েছেন, তারাও শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মুখ খুলছেন না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল আকর্ষণীয়। তবে কয়েক বছর ধরে এখানকার শিক্ষার মান পড়তির দিকে। ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সফিকুল হক চৌধুরীর মৃত্যুর পর তানভীরের হাতে চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। রেজিস্ট্রারের পাশাপাশি তিনি একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সচিবের দায়িত্বও পালন করছেন।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button