অর্থ ও বাণিজ্যইউরোপবাংলাদেশ

দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান ক্যামাইউর জন্য পোশাক তৈরি করে বিপাকে বাংলাদেশে

ফ্রান্সের ‘ক্যামাইউ’ নামে প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন দেশটির একটি আদালত। খেলাপি ঋণবিষয়ক মামলায় দীর্ঘ শুনানির পর আদালত এ সিদ্ধান্ত জানান। এরপর ১ অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করে। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ফ্যাশন হাউসটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছিল। বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই পোশাক নিচ্ছিল ক্যামাইউ।

তাই ফ্রান্সের দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান ক্যামাইউর জন্য পোশাক তৈরি করে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি। কোম্পানিটির সরবরাহ করা পণ্যের দাম পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

৪ অক্টোবর দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোকে চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লেনদেনের তথ্য জানানোর অনুরোধ করে। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএকে জানিয়েছে যে, ক্যামাইউ তাদের ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৮ পিস পোশাক তৈরির অর্ডার দিয়েছিল। এর মূল্য ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৫১ হাজার ৯৩০ টাকা (১ ডলার সমান ১০৫ টাকা ধরে)।

এর মধ্যে গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ নামে প্রতিষ্ঠানের অর্ডার সবচেয়ে বেশি। প্রতিষ্ঠানটি ক্যামাইউ থেকে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৪ পিস পোশাক তৈরির অর্ডার পেয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৯৯ পিস পোশাক প্রতিষ্ঠানটিতে পৌঁছে গেছে। ফ্রান্সের বিমানবন্দরে ৬৫ হাজার ৯৪৪ পিস পোশাক ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আর বাকি ১ লাখ ২৭ হাজার ১১ পিস পোশাক বাংলাদেশের কারখানায় রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

ক্যামাইউ তাদের ওয়েবসাইটে ফরাসি ভাষার নিজেদের দেউলিয়া প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা আছে—ক্যামাইউ, শেষ। ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতিদিন আমাদের সংগ্রহের ফ্যাশন শপিং পণ্য আপনার কাছের শোরুমে থেকে সরবরাহ করেছি। যে কারণে ফরাসি নারীদের কাছে একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। কিন্তু একটি বিশৃঙ্খল প্রেক্ষাপটে অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।

ক্যামাইউ স্টোর এবং ক্যামাইউ ওয়েবসাইট এখন স্থায়ীভাবে বন্ধ। ১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর থেকে ক্যামাইউকে বাধ্যতামূলক লিকুইডেশনে রাখা হয়েছে, এ তারিখের পরে কোনো টাকা ফেরত বা বিনিময় অসম্ভব হবে। ক্যামাইউ এ পরিস্থিতির জন্য অনুতপ্ত এবং গ্রাহকদের বিষয়টি বোঝার অনুরোধ করেছে।

আরেকটি প্রতিষ্ঠান কেইলক নিউএজ বাংলাদেশ লিমিটেড জানিয়েছে, ক্যামাইউ তাদের ৪৮ হাজার ১২৪ পিস পোশাক তৈরির অর্ডার দিয়েছিল। সব পোশাক তৈরি করে ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পোশাকগুলো বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

আর কানিজ গার্মেন্টস জানিয়েছে, তারা ৪৮ হাজার পিসের অর্ডার পেয়েছিল। এর মধ্যে ১২ হাজার পিস ফ্রান্সে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। ৩৬ হাজার পিস তারা এখনো তৈরি করেনি। এসব পোশাক উৎপাদন স্থগিত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কালবেলাকে বলেন, ক্যামাইউ দেউলিয়া হওয়ায় যে পরিমাণ ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা আরও বাড়বে। অনেকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করছেন। এর পরও কিছু সমস্যা থেকে যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব বিষয় সমাধানে ব্যাংক দায়িত্ব নেয় না। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও এড়িয়ে যায়। যে কারণে সমাধানটা জটিল।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button