এক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশ

বাধ্যতামূলক অবসরের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে সরকার বিশেষ কোন বার্তা দিচ্ছে?

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ‘বাধ্যতামূলক অবসরে’ পাঠানোর একদিন পরই পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিনজন কর্মকর্তাকে একই ভাবে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এই ‘বাধ্যতামূলক’ অবসর নিয়ে এখন পুলিশ ও প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই অবসররের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী সরকার বিশেষ কোন বার্তা দিচ্ছে?

মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর আগে গত রোববার তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠায় সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেয়া হলো।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই বাধ্যতামূলক অবসর প্রশাসনে অস্থিরতার সৃষ্টি করবে। যেটা সরকারের জন্যও ভালো নয়, প্রশাসনের জন্য ভালো নয়। সবার মধ্যে এখন কাজ করতে গেলে এক ধরনের সংশয় কাজ করবে। এতে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্থ হবে।

আর সংবাদ মাধ্যমে সচিব বা তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ লেখা হয়েছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে তো তাদের অবসরে না পাঠিয়ে বিভাগীয় বা ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। বাধ্যতামূলক অবসর তো কোন শাস্তি নয়। তিনি তো সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন।”

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অবসরে পাঠানোতে প্রশাসনে কোন প্রভাব পড়বে না। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সরকার এই প্রক্রিয়ায় যে কাউকে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে অবসরে পাঠাতে পারে। এতে প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার কিছু নেই।”

সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, “বিএনপি শাসনামলে এমন বেশ কয়েকজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। পরে সেই কর্মকর্তারা আদালতে গেলে আদালত তাদের পূর্ণবহালের আদেশ দেন। কারণ যে আইনের বলে জনস্বার্থে তাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে আদালতে সরকার সেই জনস্বার্থ প্রমান করতে পারেনি। এই ধারাটি মূলত করা হয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থে। যাতে তারা ২৫ বছর পর চাইলে নিজেই অবসরে যেতে পারেন।”

এক রিপোর্টে জানা যায়, “বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে আরো পাঁচ সচিবকে। সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। শুধু সচিব নন, কয়েক জন অতিরিক্ত সচিবও আছেন এই ষড়যন্ত্রে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ১২।

কাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই ১২ জনের দৈনন্দিন চলাফেরা, মোবাইল ফোনে যোগাযোগসহ দেশে-বিদেশে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছে। বর্তমান সচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কয়েক জন সচিবও এ কাজে যুক্ত আছেন। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হতে পারে।”

সাবেক জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই ধরনের অবসরের মাধ্যমে আইনের তো কোন ব্যত্যয় হচ্ছে না। আইন সরকারকে সেই সুযোগ দিয়েছে। এতে প্রশাসনে অস্থিরতারও কিছু নেই।” নির্বাচনের আগে এই অবসর কি কোন বার্তা বহন করে?

জবাবে জনাব হারুন বলেন, “নির্বাচনের সঙ্গে প্রশাসনের শৃঙ্খলার কোন সম্পর্ক নেই। এখন নির্বাচনের নামে সরকার তো হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। দৈনন্দিন কার্যক্রম তো স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। সেখানে যদি কেউ অপরাধ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতেই হবে। তা না হলে শৃঙ্খলা থাকবে না।”

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button