ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে এই তালিকা। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সচেতনতার অভাবেই এবার বেড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে না আসা এবং অবহেলার কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে।

এবছর প্রতি জেলায়ই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। দেশে একদিনে ডেঙ্গুতে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে এখন পর্যন্ত ১১০ জনের মৃত্যু হলো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিতে পারবে ঠিকই, কিন্তু এডিস মশা মারতে পারবে না।

ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার চিকিৎসা দিতে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী। ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ’র নতুন হাসপাতাল ইউনিট এবং লালকুঠি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিতে পারবে ঠিকই, কিন্তু এডিস মশা মারতে পারবে না।

সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে এখন পর্যন্ত ১১০ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৯৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৭৪ জনে। চলতি বছরে ২৮ হাজার ৬৯৮ ডেঙ্গু রোগী সারা দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ২০ হাজার ৬০০ জন রাজধানী ঢাকায় এবং ৮ হাজার ৯৮ জন রোগী ঢাকার বাইরে।

চলতি মাসের ২০ দিনে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২ হাজার ৬০৬ জন এবং মারা গেছেন ৫৫ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯১১ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৮৯৬ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৫৯ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৮৯৬ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৭৪ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ১৫৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫ জন।

এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০শে অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ২৮ হাজার ৬৯৮ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ২৫ হাজার ৪১৪ জন। এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিটেড ডিজিজেস (এটিডিএস) নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, অক্টোবর মাসের শেষে বা নভেম্বর মাসের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে পারে।

তবে এডিস মশার জন্মে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে (বৃষ্টি না হলে) খুব দ্রুত প্রাদুর্ভাব কমবে বলেও আশা তার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সচেতনতার অভাবেই এবার বেড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে না আসা এবং অবহেলার কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু অনেক কমে আসবে।

গতকাল রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ‘আবুল হোসেন রেসপাইরেটরি ও নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতের পক্ষ থেকে এডিস মশা নিধনে নিজেদের বাসা বাড়িতে পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করতে ও মশার কামড় থেকে বাঁচাতে পরামর্শমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু মশা মারার কাজ তো স্বাস্থ্যখাতের নয়। মশা মারার গুরুত্ব তুলে ধরে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রতিনিধিদেরকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এখন মশা কমলে ডেঙ্গু রোগীও কমে যাবে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপও কমে যাবে।

Exit mobile version