এক্সক্লুসিভকৃষি, প্রাণী ও পরিবেশজাতীয়প্রাকৃতিক দুর্যোগবাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের এলোমেলো আচরণে সঠিক পূর্বাভাস মেলেনি

‘সুপার সাইক্লোন’, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’—এ রকম নানা নামে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা সূত্র থেকে। গতকাল সোমবার দুপুরেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, এটি হবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়।

তবে শেষ পর্যন্ত সিত্রাং বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় হয়নি। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭৪ কিলোমিটার।বাংলাদেশের উপকূলে সিত্রাং আঘাত করার সময় নিয়ে আগের করা পূর্বাভাসগুলোও পুরোপুরি মেলেনি।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ আজ বলেন, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। সিত্রাংয়েরও আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। তবে এটি ছিল বেশ এলোমেলো।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে বলেছিল, সিত্রাং গতকাল গভীর রাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে। তবে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। এরপর রাত নয়টার পর মূল অংশ আঘাত হানে। রাত একটার মধ্যেই উপকূল মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায়। পূর্বাভাস না মেলার কারণ প্রথম আলোকে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, শুরু থেকেই সিত্রাং এলোমেলো আচরণ করতে শুরু করে। বারবার পাল্টাতে থাকে গতিপথও। তাই এর গতিবিধি ঠিকমতো বোঝা যায়নি। আসতে পথে বৃষ্টি ঝরিয়ে নিজের শক্তি ক্ষয় করেছে। এসেছে দ্রুত, চলেও গেছে দ্রুত।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদের মতে, ঘূর্ণিঝড় হিসেবে গঠিত হওয়ার আগে নিম্নচাপের সময়ই এটি তিন অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। আর বারবার পাল্টেছে গতিপথ। প্রথমে ভারতের ওডিশা, পরে পশ্চিমবঙ্গ এবং শেষে বাংলাদেশের উপকূলমুখী হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরও গতকাল পর্যন্ত একে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলেছে। কিন্তু আসার পথে এটি প্রবল বৃষ্টি ঝরায়। তাতে এর শক্তিক্ষয় হয়। তাই এটি দ্রুত আসে এবং দ্রুতই চলে যায়।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হয় ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। এর কাছাকাছি সময়ে চট্টগ্রামেও বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭৪ কিলোমিটার, ভোলায় ৬৫ কিলোমিটার। রাত আড়াইটায় গোপালগঞ্জে সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭৫ কিলোমিটার।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ সকাল ছয়টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে সিত্রাংয়ের অবস্থান ছিল নেত্রকোনা ও এর কাছাকাছি এলাকায়। ছয় ঘণ্টার মধ্যে এটি শক্তিহীন হয়ে পড়বে।

বজলুর রশীদ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ব্যতিক্রমী আচরণের জন্য এটি নির্ণয়ের মডেলগুলোতেও পরিবর্তন হয়েছে বারবার। অনিশ্চিত গতিবিধির কারণেই এর আসার সময় এবং এর আকার সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন হয়ে পড়ছিল। আগে বৃষ্টি ঝরানোর ফলে এটি সাগরে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। দ্রুত চলে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দেশজুড়ে কেড়ে নিয়েছে ১১ জনের প্রাণ। এর মধ্যে গতকাল সাতজনের মৃত্যু হয়েছে গাছের চাপায়; দুজনের মৃত্যু হয়েছে নৌকাডুবিতে। আর আজ একজন পানিতে ডুবে ও একজন গাছচাপায় মারা গেছে। এ ঝড়ের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button