অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

প্রকৌশলী খুনের ঘটনায় কালো টি-শার্ট পরা যুবককে খুঁজছে পুলিশ

মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন মজুমদার (৫১) নিয়মিত ধানমন্ডি লেকে হাঁটাহাঁটি করতেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে কলাবাগানের বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন। দীর্ঘ সময় হাঁটতেন। ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ায় শনিবার একটু বেশি হাঁটার উদ্যোগ নেন তিনি।

হাঁটার মধ্যেই রাত ১২টায় নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী এক ঘণ্টার জন্য লেকের রবীন্দ্র সরোবর এলাকার বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধার হয়ে যায় লেক এলাকা। তখনই খুনিদের টার্গেটে পরিণত হন। ধারালো ছুরি দিয়ে তার শরীরের চারটি স্থানে জখম করা হয়। এরপর ঘটনাস্থলের ১০-১৫ গজ দূরে ছুরিটি ফেলে প্রকৌশলীর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে দৌড়ে পালায় খুনি। তার পরনে ছিল কালো রঙের টি-শার্ট ও সাদা জুতা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এখন তাকে খুঁজছে।

জানতে চাইলে ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ঘটনার পূর্বাপর দেখে আপাতদৃষ্টিতে এটিকে ছিনতাইকারীদের কাজ বলে মনে হয়েছে। প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী। তার থেকে ছিনতাই করতে সফল না হয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে থাকতে পারে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মূল অপরাধীকে ধরার পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। আমরা সেই চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছি। এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকৌশলী শাহাদতের সঙ্গে কারও কোনো ধরনের পূর্বশত্রুতার খবর পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এর নেপথ্যে ছিনতাইকারীরা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অপরাধীদের ধরার আগে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।

ইতোমধ্যে খুনিকে ধরতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। খুনের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে সিসিটিভির ফুটেজেও ঘটনা ধরে পড়েনি। এজন্য পুলিশ আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে।

জেনারেটর চালু থাকায় এই ফুটেজগুলো পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে চারটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে খুনির দৈহিক গঠন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। চারটি ফুটেজের মধ্যে একটি কালার ভিশন ক্যামেরার ফুটেজও রয়েছে। এর পাশাপাশি অপরাধীকে শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তিকেও কাজে লাগাচ্ছে পুলিশ। ছিনতাই হওয়া ফোনের সর্বশেষ অবস্থান দেখা গেছে কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছে।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ‘রাত ১২টা-১টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডটি হয়। ঘটনাস্থলের ১০-১৫ গজ দূরে একটি রক্তমাখা চাইনিজ ছুরি পাওয়া যায়। এটি দিয়েই ইঞ্জিনিয়ার শাহাদতকে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় এক নাকি একাধিক ব্যক্তি সম্পৃক্ত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কারণ, ঘটনার সময় সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে অনেক ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তবে জেনারেটর চালু থাকায় পাশের একটি স্থানের পরিষ্কার একটি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখানে একজনকে দৌড়ে যেতে দেখা গেছে। আমরা তাকে নিয়ে কাজ করছি।’

তদন্তসংশ্লিষ্টরা আরও জানান, নিয়মিতই লেকে হাঁটাহাঁটি করতেন শাহাদত। ফলে খুনের ঘটনার তদন্তে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছেন তারা। প্রথমত, রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত নিয়মিত লোডশেডিংয়ের সময় হয়তো ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে, আর তখনই টার্গেটে পরিণত হন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত।

দ্বিতীয়ত, নিয়মিত হাঁটাহাঁটিার কারণে আগে থেকেই হয়তো পেশাদার ছিনতাইকারীরা তাকে টার্গেট করে রাখতে পারে। তৃতীয়ত, শাহাদতকে খুনের পরিকল্পনা অনেক আগেই হয়। আর বাস্তবায়ন হয় শনিবার। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যা পাওয়া গেছে, তাতে পরিকল্পিত খুন হওয়ার আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ।

নিহতের বড় ভাই মোতালেব হোসেন জানান, তার ভাই ধানমন্ডির লেকপাড়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করত। পারিবারিক বা পেশাগতভাবে তার সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তবুও কেন এমন হলো তিনি বুঝতে পারছেন না।

নিহতের শরীরের আঘাতের চিহ্ন বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা আরও বলেন, হয়তো খুন করা ছিনতাইকারীর উদ্দেশ্য ছিল না। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী, সেজন্য তার কাছে ছিনতাইকারী ধরা পড়ে। তখন তার থেকে ছুটতে ছিনতাইকারী ধারালো ছুরি দিয়ে বুকে, পেটে, হাতে ও পিঠে আঘাত করে। মনে হয় খুনিকে জাপটে ধরেছিলেন প্রকৌশলী। ফলে তাকে জখম করে দৌড়ে পালায় খুনি। এ সময় ফেলে যায় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি।

প্রসঙ্গত, শনিবার রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের পাড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন মজুমদারের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভোরে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেন তিনি। এ ঘটনায় রোববার বিকালে ধানমন্ডি থানায় ছিনতাই ও হত্যা মামলা হয়েছে। শাহাদতের স্ত্রীর ভাই মো. জুয়েল মামলাটি করেন।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button