খুলনাবাগেরহাট

বিদ্যুৎহীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোমের আলোয় জন্ম নিল নবজাতক

গতকাল সোমবার ঝড়ের রাতে বিদ্যুৎহীন মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোমের আলোয় জন্ম নিল ৭ নবজাতক ।মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সদের সহযোগিতায় মোমবাতির আলোয় নবজাতকদের জন্ম দেয় প্রসূতি মায়েরা।মা ও নবজাতকেরা সবাই সুস্থ আছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সকাল থেকেই বাগেরহাট সহ সারা দেশে অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরে তখন ৭ নম্বর বিপৎসংকেত। এমন দুর্যোগের মধ্যে সন্ধ্যার দিকে প্রসববেদনা ওঠে নাঈমা বেগমের (২০)। সবাই তখন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। ধাত্রীর খোঁজ করেও পাওয়া গেল না।

এমন পরিস্থিতিতে নাঈমাকে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যানে করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি।দুর্যোগের কারণে আগে থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিদ্যুৎহীন।উপায়ান্তর না দেখে নার্সদের সহযোগিতায় মোমবাতির আলোয় নাঈমার প্রসব করানোর কাজ করেন চিকিৎসক। সাধারণ প্রসবের মাধ্যমে নাঈমা জন্ম দেন ফুটফুটে এক সন্তান।

মোংলা উপকূলীয় এলাকায় সোমবার বিকেল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত চলছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব।মুষলধারায় বৃষ্টি, দমকা হাওয়া, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর এই অন্ধকারেই সন্তানের মুখের আলো দেখলেন সাত গর্ভধারিণী মা।শুধু নাঈমার নয়, গতকাল সোমবার ঝড়ের রাতে তাঁর মতো মোমের আলোয় নবজাতকের জন্ম দেন আরও ছয় প্রসূতি।

সন্তান জন্ম দেওয়া ঐ প্রসূতি মায়েরা হলেন উপজেলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার জাকির হাওলাদারের স্ত্রী মনিরা (৩৩), মাকোরঢোন এলাকার বাসিন্দা সোহাগ সরদারের স্ত্রী মুক্তা বেগম (১৯), আরাজী মাকোরঢোন এলাকার মেহেদী হাসানের স্ত্রী বনানী (১৯), বাঁশতলা এলাকার মাছুমের স্ত্রী নাঈমা বেগম (২০), নারকেলতলা এলাকার মজিবর হাওলাদারের স্ত্রী রাজিয়া (৩০), মালগাজী এলাকার মানিক শেখের স্ত্রী মিলা (২৬) ও ভাসানী সড়কের আবুল হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম (৪২)।

মুক্তা বেগ‌ম নামের এক প্রসূতি মা ব‌লেন, আবহাওয়া খারাপ হ‌তে শুরু কর‌লে স্থানীয়ভা‌বে প্রসব করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কোনো উপায় করতে না পেরে ঝড়ের মধ্যে মাকোরঢোন থেকে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অন্ধকার হয়ে যায়। চিকিৎসক ও নার্সরা মোমবাতির আলো দিয়ে তাঁর সন্তান প্রসব করান।

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহীন বলেন, গতকাল ঝড়ের রাতে সাত প্রসূতিকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন স্বজনেরা। কিন্তু ঝড়ের কারণে হাসপাতালে বিদ্যুৎ ছিল না। উপায়ান্তর না পেয়ে নার্সদের দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে¦প্রসূতিদের সন্তান প্রসব করানো হয়। এভাবে সাতটি নবজাতকের জন্ম হয়। তাদের সবাই সুস্থ আছে।

এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সসহ পুরো দলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার। তিনি বলেন, এভাবে কাজ করলে দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button