এশিয়াদুর্ঘটনা

ভারতের গুজরাটে সেতু ধসের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ১৪১ জন

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাট প্রদেশের মরবি জেলায় ব্রিটিশ আমলের একটি ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১ হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ঘটনায় ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।এ ছাড়া অনেককে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও অনেকে নিখেঁজ রয়েছেন, তাদের সন্ধানে নদীতে তল্লাশি চলছে।খবর এনডিটিভির।

মোরবি জেলায় মাচ্চু নদীর উপর ওই ঝুলন্ত সেতুটি রোববার সন্ধ্যায় কয়েকশ মানুষ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে। বিবিসি জানিয়েছে, সে সময় সেতুতে থাকা অনেকেই ছিটকে নদীতে পড়ে যান। সোশাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে ভেঙে পড়া সেতু থেকে মানুষকে ঝুলে থাকতেও দেখা যায়।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, সেতুটি ভেঙে মাচ্চু নদীতে পড়ার সময় সেখানে ৫০০ মানুষ ছিলেন। তারা ছট পূজার কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করতে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখনো শতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।

সোশাল মিডিয়ায় আসা কিছু ভিডিওতে দুর্ঘটনার সময়ের বিশৃঙ্খলার চিত্রও এসেছে। সেখানে দেখা যায় ধসে পড়ার আগে সেতুটি দুলতে শুরু করেছিল। যে কেবলের ওপর সেতুটি ঝুলছিল, সেগুলো ছিঁড়তে শুরু করলে অন্ধকার নদীতে ভেঙে পড়ে সেতুটি। তখনও অর্ধেক ঝুলে থাকা সেতুর উপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করছিলেন অনেকে।

প্রতীক ভাসাভা নামের একজন স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, দুর্ঘটনার সময় তিনি সেতুর উপরে ছিলেন। পানিতে পড়ে যাওয়ার পর সাঁতরে তীরে ওঠেন। কয়েকটি শিশুকেও তিনি নদীতে পড়ে যেতে দেখেছেন। ‘আমি তাদের কয়েকজনকে আমার সাথে টেনে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা ডুবে গেছে কিংবা ভেসে গেছে।’

আহমেদাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯ শতকে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময়। স্থানীয়দের কাছে জুল্টো পুল নামে পরিচিত ২৩০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুতে অনেকেই বেড়াতে যান।

সাত মাস বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ সেরে মাত্র চার দিন আগেই গুজরাতের নববর্ষের দিন (২৬ অক্টোবর) খুলে দেওয়া হয়েছিল সেতুটি। কেন সেটি ভেঙে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট প্রশাসন।

সেতু ধসের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান প্রশাসনের কর্মকর্তারা; শুরু হয় উদ্ধার কাজ। রাজ্য সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ব্রিজেশ মের্জা এনডিটিভিকে বলেন, ‘সংস্কারের কাজ মাত্র গত সপ্তাহেই শেষ হল। আমরাও স্তম্ভিত। বিষয়টা আমরা অবশ্যই দেখব।’

গুজরাটের শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ব্রিজেশ মের্জা এনডিটিভিকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে। আমরাও হতবাক। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সরকার এ ঘটনার দায় নিয়েছে।’

গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সঙ্ঘভী বলেছেন, এ ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে তদন্তের জন্য।

আর স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের প্রধান সন্দ্বীপসিং জালা বলেছেন, সংস্কার শেষে সেতুটি খুলে দেওয়ার আগে ঠিকাদার প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি।

এদিকে এ ঘটনার দিন গুজরাটেই ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং জরুরি উদ্ধার অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। আহতদের উদ্ধারে স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধার প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে দুই লাখ রুপি এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৪ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে দেবে রাজ্য সরকার।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button