অপরাধঢাকাবাংলাদেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরাজধানী

ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে দেশে অনলাইনে জুয়া, ছয়জন গ্রেপ্তার

‘মুনফ্রগ ল্যাবস’ নামের ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে দেশে অনলাইনে বিভিন্ন জুয়া পরিচালনার অভিযোগে একটি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‍্যাব বলছে, কম্পিউটার বা মোবাইল গেমের নামে অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করে ২০০ কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছ থেকে গেম বানানোর কথা বলে অনুমতি নেয় ‘উল্কা গেমস লিমিটেড’। এরপরে মুনফ্রগ ল্যাবসের মাধ্যমে দেশে অনলাইন জুয়ার কারবার শুরু করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন— জামিলুর রশিদ (৩১), সায়মন হোসেন (২৯), মো. রিদোয়ান আহমেদ (২৯), মো. রাকিবুল আলম (২৯), মো. মুনতাকিম আহমেদ (৩৭) ও কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ (৩২)। গতকাল রোববার রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা থেকে র‌্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

মুনফ্রগের অনলাইন জুয়ার অ্যাপ তিনপাত্তি গোল্ডের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেলে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে জামিলুর উল্কা গেমস নামের একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। দেশে গেম বানানোর অনুমোদন থাকলেও অনলাইন জুয়া বা ক্যাসিনোর অনুমোদন না থাকায় ভুল তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ওই প্রতিষ্ঠান আইনি বৈধতা পায়।র‍্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপে জুয়া পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা দেশের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গেম বানানোর নামে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে পাঠানোর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। পরে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম নজরদারি বাড়ায়। খন্দকার মঈন বলেন, চক্রের হোতা উল্কা গেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামিলুর রশিদ। ২০১৭ সালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাবসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ২০১৮ সালে মুনফ্রগের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেড় লাখ টাকার বেশি বেতনে এতে যুক্ত হন তিনি।

র‍্যাব জানায়, তিনপাত্তি গোল্ড মূলত একটি অ্যাপ, যা মুঠোফোনে ডাউনলোড করে খেলা যায়। এই অ্যাপের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ মুনফ্রগ ল্যাবসের হাতে। এটি ছাড়াও ‘রাখি’, ‘অন্দর বাহার’ ও ‘পোকার’ নামের অনলাইন জুয়ার গেমস আছে। তিনপাত্তি গোল্ডে নিবন্ধন করার পরে একজন গ্রাহক খেলার জন্য কিছু ‘চিপস’ বিনা মূল্যে পেয়ে থাকেন।

বিনা মূল্যের চিপস শেষ হয়ে গেলে গেম খেলতে টাকা দিয়ে চিপস কিনতে হয়। মূলত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চিপস কেনার লেনদেন হতো। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার কোটি চিপস বিক্রি হয় এবং প্রতি কোটি চিপস বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৬ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

র‍্যাব আরও জানিয়েছে, কম্পিউটারের স্বয়ংক্রিয় খেলোয়াড়, অর্থাৎ প্লেয়ারের মাধ্যমে যারা অনলাইনে জুয়া খেলেন, তাঁদের কৌশলে হারিয়ে আরও চিপস কিনতে উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশে এই তিনপাত্তি গোল্ডের চিপস বিক্রি করার জন্য ১৪ জন প্রতিনিধি বা এজেন্ট রয়েছেন। প্রতিনিধিদের আবার উপপ্রতিনিধি (সাব–এজেন্ট) রয়েছেন। দেশে বর্তমানে তিনপাত্তি গোল্ডের প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেমার বা খেলোয়াড় রয়েছেন এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, জামিলুর রশিদ ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিদেশ থেকে ২০১২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন।২০১৫ সালে গেম তৈরির কাজ শুরু করেন। ‘হিরোজ অব ৭১’ ও ‘মুক্তি ক্যাম্প’ নামের দুটি গেমের জন্য ২০১৭ সালে তিনি সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন।

ওই বছর মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ২০১৮ সালে দেড় লাখ টাকা বেতনে গেম ডিজাইন কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মুনফ্রগের কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত হন তিনি। ২০১৯ সালে উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠা করে এর সিইও হিসেবে জামিলুর রশিদ মুনফ্রগ থেকে প্রতি মাসে চার লাখ টাকা পেতেন বলে তথ্য দিয়েছে র‌্যাব। র‍্যাব জানায়, জামিলুরের ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থ, একটি দামি গাড়ি এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট ও জমির তথ্য পাওয়া গেছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button