বরিশালে গণসমাবেশের মাঠেই নেতা-কর্মীরা জুমার নামাজ আদায় করেছেন

বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের মাঠেই আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করেছেন সেখানে রাতে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও বরিশালের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতারাও এ সময় উপস্থিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেও দোয়া করা হয়।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বরগুনা থেকে আসা বিএনপি কর্মী মো. লিমন বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার রাতেই এখানে এসেছি। সমাবেশ ঘিরে বাস ও অন্য যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় আগেভাগে চলে এসেছি। রাতে এখানেই থাকতে হয়েছে। আজ জুমার নামাজ আদায় করলাম। ভালোই লাগছে। এটা আমাদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা।’
আজিজুর রহমান নামে ভোলা থেকে আসা আরেক বিএনপি কর্মী বলেন, ‘সরকার যদি বাস-লঞ্চ বন্ধ করে না দিত, তাহলে আমাদের আজ মাঠে নামাজ আদায় করতে হতো না। আমরা এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করে শনিবার সভাস্থলে আসতে পারতাম।’
আজ সকাল থেকেই বরিশালে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি তিন চাকার যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। দুপুরে সমাবেশস্থল ঘুরে দেখা যায়, এখানে মূলত বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার নেতা-কর্মীরা আগেভাগে অবস্থান নিয়েছেন।
তাঁদের অনেকে জানালেন, সকাল থেকে এসব জেলা থেকে আরও অনেক নেতা-কর্মী নৌপথে ট্রলার এবং পণ্যবাহী নৌযান নিয়ে সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। একই সঙ্গে পিরোজপুর জেলার নেতা-কর্মীরা শতাধিক ট্রলারে সমাবেশে যোগ দিতে আজ সকালে রওনা দিয়েছেন।
গণসমাবেশ সামনে রেখে গতকাল দুপুর থেকেই বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা আসতে শুরু করেন। আজও তা অব্যাহত আছে। আজ সকাল থেকে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় অথবা নৌপথে মাছ ধরা ট্রলার, খেয়া নৌকা, পণ্যবাহী কার্গোতে করে বরিশালে আসছেন নেতা-কর্মীরা। বরিশাল নগরে সব ধরনের ছোট যান চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রলার থেকে নেমে দল বেঁধে হেঁটে সমাবেশস্থলে আসছেন তাঁরা।
ওয়াহিদুল ইসলাম নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, ‘এই সরকার আমাদের আটকে রাখতে চেয়েছিল। আমরা দুই দিন আগেই মাঠে এসেছি। নামাজও আদায় করলাম। আমরা মাঠেই রাত কাটিয়েছি, আবার মাঠেই খেয়েছি। সমাবেশ শেষ করেই বাড়ি ফিরব।’
বাস, লঞ্চ, তিন চাকার যানবাহন বন্ধ হওয়ার পর এখন ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসও বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে সারা দেশের সঙ্গে পুরো বরিশাল বিভাগের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন কেবল আকাশপথে উড়োজাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের পরিবহন বন্ধ করে আটকে রাখা যাবে না। সমাবেশস্থলেই এত নেতা-কর্মী, তাহলে ভাবুন বরিশাল নগরীতে কত নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন। সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে।’
ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার মালিকদের সংগঠন জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আবদুল জলিল বলেন, সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্র ও শনিবার দুদিন ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কারও চাপ আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কারও চাপে নয়, বরং আতঙ্কে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী দুই দিন (৪ ও ৫ নভেম্বর) আমাদের তেমন কোনো ট্রিপ হবে না। এ জন্য আমরা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে জরুরি সেবা, যেমন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের সেবা দেব।’