এক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

সারাদেশ থেকে বিছিন্ন বরিশালে আজ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে দেশের দক্ষিণের বিভাগ বরিশালে। ‘ধর্মঘটের’ কারণে গতকাল শুক্রবার থেকে বরিশাল মহানগর কার্যত সারাদেশ থেকে বিছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

কেবল আকাশপথে উড়োজাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় আজ শনিবার বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের পর এটি বিএনপির পঞ্চম বিভাগীয় গণসমাবেশ।

বরিশাল মহানগরে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সমাবেশের আমেজ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সমাবেশে রূপ নেয়। গতকাল শুক্রবার সূর্যাস্তের আগেই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশ এলাকা। আগত নেতাকর্মীর মধ্যে নারীরাও রয়েছেন।

বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা একের পর এক মিছিল ঢুকছে সমাবেশের মাঠে। ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসহ স্থানীয় নেতাদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও মিছিল নিয়ে আসছেন তারা। সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে। এ সমাবেশ ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা চলছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের আগে যা করা হয়েছে, সরকার বরিশালেও তাই করেছে। এতে করে সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির যৌক্তিক দাবির পক্ষে এ অঞ্চলের মানুষকে আরও প্রতিবাদী করে তুলেছে। সে কারণে মানুষ সব বাধা পেরিয়ে এখনো স্রোতের মতো আসছে, যে যেভাবে পারছে।

মহানগরবাসীর মধ্যে আছে উৎকণ্ঠা। ভেতরে ভেতরে চাপা উত্তেজনাও কাজ করছে। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ মিছিল করেছে। নগরের বাইরে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি জায়গায় মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।

ছাত্রলীগ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে সদর রোডসহ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরে অবস্থান না করায় কোনো অঘটন ঘটেনি। তবে শহরের বাইরে বিভিন্ন প্রবেশপথে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা শোডাউন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি বর্ণনা করে গতকাল বিকালে বরিশাল নগরের অটোরিকশা চালক মোজাহিদ বলেন, একদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বরিশালে আসছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মিছিল করেছে। শুক্রবারও করেছে। এই নিয়ে চাপা উত্তেজনা আছে। নগরীর মধ্যে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। কিছু রিকশা চলছে। কিন্তু তার সংখ্যা কম।

সমাবেশে কেন্দ্র করে নগরের প্রবেশপথে পুলিশের তল্লাশি চৌকি দেখা গেছে। সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশি করে পুলিশ। শহরে বিভিন্ন সড়কে র‌্যাব-পুলিশের টহল দিয়েছে। বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পরিবহন বন্ধ করে তাদের নেতাকর্মীদের আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ তল্লাশি চালায় বলেও অভিযোগ করে দলটি।

গত বৃহস্পতিবার লঞ্চ এবং গতকাল শুক্রবার থেকে ছোট-বড় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার আগেই বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং বরিশাল জেলার ৪২ উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা বরিশাল মহানগরীতে প্রবেশ করতে থাকেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রলার ও বালুবাহী জাহাজ-বাল্কহেড করে রওনা হন নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ মাঠে কথা হয় বিএনপির শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ উজ জামানের সঙ্গে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ধর্মঘট শুরুর আগে বরগুনা থেকে ট্রলার ও বাল্কহেড ভাড়া করে এ পর্যন্ত চার হাজার নেতাকর্মীরা বরিশালে এসেছেন। তাদের একটি অংশ সমাবেশস্থলে তাঁবু টেনে সেখানেই রান্নাবান্না, ঘুম, খাওয়া দাওয়া এবং নামাজ আদায় করছেন। শুক্রবার রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে আরও ৮-৯ হাজার নেতাকর্মী ট্রলার ও বাল্কহেডে বরিশালে পৌঁছবেন। ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছেন তারা।

গতকাল শুক্রবার বিকালে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু উদ্যানে মাঠের উত্তর ও দক্ষিণে প্রবেশপথ দিয়ে একের পর মিছিল প্রবেশ করছে। কাপড় চোপড়ের ব্যাগ নিয়ে রাতে থাকার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ভোলা জেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল মাঠের দক্ষিণদিকের পথ দিয়ে প্রবেশ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপায়ে ট্রলারে বরিশালে পৌঁছেছেন।

নগরের মধ্যে একত্রিত হয়ে মিছিল করে সমাবেশ মাঠে পৌঁছান তারা। এভাবে পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা একের পর মিছিল নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। সমাবেশস্থলে যে কমিটি মিছিল নিয়ে আসছে সমাবেশের মাইকে তাদের পরিচয় জানানো হয়। দীর্ঘ যাত্রা শেষে আসা নেতাকর্মীদের অনেকেই মাঠে কাপড় বিছিয়ে শুয়ে পড়েন, গল্প করে সময় কাটান।

শুধু বরিশাল অঞ্চল নয়, দলের টানে দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নেতাকর্মী এসেছেন বরিশালে। তাদেরই দ্জুন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আসা দুই বিএনপি নেতা মামুনর রশিদ ও ইমাম হোসেন। তারা জানান, পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে তাই বৃহস্পতিবার বরিশালে পৌঁছেছেন। গাইবান্ধা জেলা মহিলা দলের দুই নেত্রীর মাথায় দলীয় ব্যান্ড বেঁধে মাঠ চষে বেড়াতে দেখা গেছে।

গণসমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশের প্রধান বক্তা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিশেষ অতিথি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান। তারা গতকাল বিমানযোগে বরিশালে পৌঁছেন।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button